close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ভৈরবে প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগে মামলা, আসামি যুবলীগ নেতা পলাতক..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভৈরবে পাম্প ব্যবহারের জেরে প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগে যুবলীগ নেতা আজিম রানার বিরুদ্ধে মামলা। গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়েছেন, ফোনও বন্ধ। তদন্তে নেমেছে পুলিশ।..

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগে যুবলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত নেতা বর্তমানে পলাতক। এ ঘটনায় স্থানীয় শিক্ষকমহলে চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষক এ কে এম মাসুদ নিজেই সোমবার সকালে ভৈরব থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় একমাত্র আসামি হিসেবে নাম উল্লেখ করা হয়েছে গজারিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি আজিম রানার।

স্কুল ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মানিকদী পূর্বকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বাস করেন আজিম রানা। প্রভাবশালী এই স্থানীয় নেতা প্রায়ই স্কুলের সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে থাকেন। শিক্ষকরা বাধা দিলে তিনি হুমকি ধামকি ও অপমানজনক আচরণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় গত বৃহস্পতিবার। স্কুল ছুটির পর কাউকে না জানিয়ে আজিম স্কুলের পানির পাম্প ব্যবহার করে নিজের পুকুরে পানি দেন। টানা দুই দিন পাম্প চালানোর ফলে সেটি বিকল হয়ে পড়ে। রোববার স্কুল খোলার পর শিক্ষক মাসুদ আজিমের বাড়িতে গিয়ে পাম্পটি মেরামতের অনুরোধ করেন। তখন আজিম বাড়িতে ছিলেন না।

সোমবার দুপুরে আজিম রানা স্কুলে এসে শিক্ষকের সেই অনুরোধে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামনেই তিনি প্রধান শিক্ষককে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন এবং মারধর শুরু করেন বলে অভিযোগ উঠে।

শিক্ষক মাসুদ বলেন, “আমি গত ৯ বছর ধরে এই স্কুলে কর্মরত। আজিমের ভয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন না। তিনি যখন যা ইচ্ছে করেন, আমাদের বাধা দেওয়ার সুযোগ থাকে না। আমি কেবল তাঁর পরিবারকে অনুরোধ করেছিলাম বিকল পাম্পটা মেরামত করে দিতে। সেই কারণে এমন বর্বর আচরণের শিকার হতে হলো।”

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি খুবই গুরুতর। স্কুল চলাকালীন প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করায় প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”

ঘটনার পরপরই আজিম রানা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, আজিম দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় দাপট দেখিয়ে চলছিলেন। স্কুলের সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো নিয়মকানুন মানতেন না তিনি।

ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানি বলেন, “মামলার পর আসামি এলাকা ছেড়েছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

এই ঘটনার পর বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। তাঁরা বলছেন, বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। শিক্ষক সমাজের দাবি—যাতে আর কোনো শিক্ষকের সঙ্গে এমন ঘটনা না ঘটে, তার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

একটি স্কুলের পাম্প ব্যবহারকে কেন্দ্র করে একজন প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনাটি শুধু ব্যক্তি আজিম রানার দৌরাত্ম্যের চিত্রই নয়, এটি সমাজে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ভয়াবহ দিকও তুলে ধরেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্তের গ্রেপ্তার এবং বিচার নিশ্চিত না হলে এমন পরিস্থিতি বারবার ঘটার আশঙ্কা থেকেই যায়।

Không có bình luận nào được tìm thấy