ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার - 'গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর'

Motior Rahman Sumon avatar   
Motior Rahman Sumon
(১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ গুলি চালালে গুলিবিদ্ধ হয়ে আব্দুল জব্বার গুরুতর আহত হন।তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঐ দিন রাতে(২১শে ফেব্রুয়ারি) হাসপাতালে মৃ..

ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার - 'গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর'

 

১৯১৯ সাল বাংলা ১৩২৬ সালের ২৬ শে আশ্বিন

ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া বর্তমান জব্বার নগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর বাবার পৈতৃক নিবাস ছিল গফরগাঁওয়ের লংগাইর ইউনিয়নে। পরবর্তীতে তাঁর বাবা পাঁচুয়া গ্রামে চলে আসেন।

আবদুল জব্বারের বাবার নাম মোঃ হোসেন আলী শেখ, মাতা শাফাতুন্নেছা।

আবদুল জব্বাররা ছিলেন পাঁচ ভাই। তিনি ছিলেন ৪র্থ। তিনি ছিলেন একজন আনসার কমান্ডার।

 

তাঁর আদি পুরুষ, বাবা-চাচারা এবং চাচাতো ভাইয়েদের অনেকে হালুয়াঘাটে জমি ক্রয় করে বসবাস করেন।

হালুয়াঘাটেও একটি রাস্তার নাম এবং কয়েকটি স্কুল কলেজের নাম ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারের নামে নামকরণ করা হয়েছে।

 

আবদুল জব্বার ১৯৫২ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে  রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে হাজার হাজার সংগ্রামী জনতার সমাবেশে যোগ দেন। সেই সময় তিনি তাঁর অসুস্থ শাশুড়িকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে সেই সময় তাঁর স্ত্রী ৬ মাসের গর্ভস্থায় ছিলেন। কতটা দেশ প্রেম, দেশের প্রতি- ভাষার প্রতি কতটা ভালোবাসা থাকলে অসুস্থ শাশুড়ি, ৬ মাসের গর্ভবতী স্ত্রীকে রেখে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া যায় সেটা অনায়েসে বোধগম্য, কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সহস্র সালাম ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি সকল ভাষা শহীদের প্রতি।

 

১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ গুলি চালালে গুলিবিদ্ধ হয়ে আব্দুল জব্বার গুরুতর আহত হন।তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঐ দিন রাতে(২১শে ফেব্রুয়ারি) হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন তিনি।

আব্দুল জব্বার সাহেবের স্ত্রীর নাম আমেনা খাতুন। এবং একমাত্র সন্তান মুক্তিযোদ্ধা, অবসর প্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার (আর্মি ) নূরুল ইসলাম বাদল ঢাকায় সরকারি বাসভবনে বসবাস করতেন। গত ১৪ - ১০ - ২০২১ খ্রি: তারিখে রাত ১০ : ৪০ মি. এ তিনি ইহধাম ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল সত্তর। 'ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়' মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

 

আব্দুল জব্বার সাহেবের- শহীদ স্মৃতি উত্তরকালে বাঙালির জাতীয় চেতনা ও দেশাত্মবোধ জাগ্রতকরণে দিশারী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে।

ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার সাহেবের স্মৃতিতে জনাব মোঃ আনোয়ার ইকবাল বিপিএম(বার), পিপিএম মাননীয় উপদেষ্টা স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এর উদ্যোগে, স্থানীয় সরকার বিভাগ,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে 'গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘর' নির্মাণ করা হয়। কমপ্লেক্সটির সামনে পূর্ব থেকে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল যা পরবর্তীতে ভাষা সৈনিক শহীদ আঃ জব্বার সর. প্রাথ. বিদ্যালয় নামকরণ করা হয়।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে এই বিদ্যালয় ও গ্রন্থাগারের সামনে নির্মিত 'শহীদ মিনার' গফরগাঁও উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে স্বীকৃত।

 

'গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর' নির্মাণের জন্য জমি দান করেন-আব্দুল জব্বার সাহেবের চাচাতো ভাই এ,এইস,এম আসাদ (নয়ন), কারিগরি নির্দেশনায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও বাস্তবায়নে জেলা পরিষদ, ময়মনসিংহ।

'গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর'টি ৭ ফাল্গুন ১৪১৪ বঙ্গাব্দ / ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ সালে উদ্বোধন করেন- ভাষা  সৈনিক জনাব আব্দুল মতিন,

-ডাঃ হালিমা খাতুন,

-বেগম রওশন আরা।

বর্তমানে গ্রন্থাগারটিতে ৫ হাজারের অধিক বই রয়েছে, নিয়মিত রাখা হয় পত্রিকা। সরকারি ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত দুজন কর্মচারীর মাধ্যমে (লাইব্রেরিয়ান ও কেয়ারটেকার) সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির দু'দিন বাদে বাকি ৫ দিন থাকে সবার জন্য উন্মুক্ত।

 

ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার সাহেবের ভাষাপ্রেম-দেশপ্রেমের নির্দশন, স্মৃতি নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, মাদক, দুর্নীতিসহ সকল অন্যায় কাজ থেকে দূরে রেখে মানবিক মানুষ হিসেবে জাগ্রত করবে বলে আশা ব্যক্ত করছি।

 

 

এম. আর. সুমন

লেখক, কৃষিবিদ, ব্যাংকার

کوئی تبصرہ نہیں ملا


News Card Generator