close
কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!
বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক সময় তীব্র আলোচনার সৃষ্টি হয় ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে। একদিকে ভারত বাংলাদেশের অস্থিরতার মধ্যে একটি বড় শক্তি হিসেবে দেখা যায়, অন্যদিকে ভারতীয় হস্তক্ষেপের অভিযোগ ও ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে ভারতের ঔপনিবেশিক সময়ে বাংলা, বিহার এবং উড়িষ্যার ভূমি নিয়েও আলোচনা করা যেতে পারে, বিশেষ করে যদি এই বিষয়টি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষিতে দেখা হয়।
ভারতের ভূমি দখল
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস দেখলে জানা যায়, ১৯৪৭ সালের পর বিভাজন হয়েছিল ইংরেজ শাসিত ভারতকে দুটি দেশের মধ্যে ভাগ করা হয়েছিল, যার এক অংশ ছিল পাকিস্তান এবং অন্য অংশ ছিল ভারত। বিভাজনের সময় বাংলাদেশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান, যা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়। তবে, ভারতের কিছু অংশের মধ্যে আঞ্চলিক বিতর্কের আগ্রহ কিছু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশের একাংশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ১৯৪৭ সালের অযৌক্তিক এবং জাতিগত বিভাজন এবং পরবর্তীতে যে সব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল তা পূর্ব বাংলাকে এবং পশ্চিম বাংলাকে আলাদা করার পেছনে ভারতের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিহার এবং উড়িষ্যাও এ সমস্যার অংশ ছিল কারণ সেসব অঞ্চলের জনগণের সঙ্গে একই ভাষা, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহাসিক সম্পর্ক ছিল বাংলাদেশিদের।
ভারতের ভূমিকা এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলী
ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের সঙ্গে বাংলাদেশের আঞ্চলিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। যদিও দুটি দেশের মধ্যকার সম্পর্ক কখনো মধুর, কখনো চাপপূর্ণ থাকে, কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং হস্তক্ষেপ বাংলাদেশে বহুবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে। বিশেষত ভারতের শাসনকাজের অঙ্গীকারগুলি যখন বাংলাদেশের স্বার্থের সঙ্গে খাপ খায় না, তখন এই বিতর্কের আগুন আরো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো বাংলাদেশে ভারতের একতরফা পানি পরিকল্পনা, বর্ডার পৃষ্ঠায় অস্থিরতা, এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইস্যুতে ভারতের হস্তক্ষেপের অভিযোগ। ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) নিয়ে ভারতের মধ্যকার সংকট এবং ত্রিপুরায় রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ দেশটিকে আরো মন্দ ভাবনায় ফেলেছে। এ ধরনের আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিষয়ক হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের আঞ্চলিক দাবির প্রতিক্রিয়া
এখন, এই ইতিহাসের প্রেক্ষিতে অনেকেই দাবি করছেন যে ভারতকে এই অঞ্চলে বাংলাদেশের ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি পুনরায় আলোচনায় আসা উচিত। বিশেষত বাংলার খণ্ডিত ভূমির বিষয়ের আলোচনা উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি রাজনীতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, যার মধ্যে স্বাধীনতার পর ১৯৪৭ সালের বিভাজনকে কেন্দ্র করে নতুন করে আলোচনা তোলা হচ্ছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিহার, বাংলা, এবং উড়িষ্যা—এই অঞ্চলগুলি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিকভাবে একত্রিত হয়ে কাজ করেছে। বাংলাদেশে একাধিক রাজনৈতিক নেতাও এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন, কিছু অঙ্গীকারের মধ্যে তাদের দাবি বা বক্তব্য সমর্থন করেছে।
ভারতীয় ভূখণ্ডের ফিরতি দাবি
বাংলাদেশে এই দাবি উঠছে যে ১৯৪৭ সালের বিভাজনের পর এই অঞ্চলগুলো আসলে ভুলভাবে ভারতীয় ভূখণ্ড হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে, একটি স্বচ্ছ ও সমঝোতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এই অঞ্চলগুলোর প্রতি তার ঐতিহাসিক দাবির কথা পুনরায় উল্লেখ করছে। তবে, এই দাবি বাংলাদেশের ভবিষ্যত রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দিক থেকে কতটা বাস্তবসম্মত তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সমাপ্তি
এই জটিল পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের কিছু অংশ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতার কারণে ভারতীয় ভূমির প্রতি তাদের প্রাচীন দাবির পুনর্বিবেচনা দাবি করছে। যদিও এটি এক বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ মনে করেন যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নত ও নিরপেক্ষ হতে হবে, যাতে তারা আন্তর্জাতিক সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে আঞ্চলিক সংকট থেকে বের হয়ে আসতে পারে।
যদিও ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে আঞ্চলিক সীমারেখা নিয়ে আলোচনা এবং দাবির বিষয়টি কঠিন, তবে এটি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের অধিকারের প্রশ্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনের বাংলাদেশ যদি এই ধরনের বিতর্কগুলো সঠিকভাবে সমাধান করতে চায়, তবে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরো শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে।
লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন, লেখক ও সাংবাদিক
Ingen kommentarer fundet