close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ভারতের সীমান্তে নজিরবিহীন নিরাপত্তা জোরদার: বিএসএফে যুক্ত হচ্ছে ১৭ হাজার নতুন সৈন্য ও ১৬টি ব্যাটালিয়ন!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
চীন ও পাকিস্তান ঘিরে বাড়তে থাকা নিরাপত্তা শঙ্কায় ভারতের বিশাল উদ্যোগ—সীমান্তে বাড়ছে বিএসএফ-এর উপস্থিতি। পূর্বে মিজোরাম ও পশ্চিমে জম্মুতে স্থাপিত হবে আধুনিক ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার। প্রতিটি তথ্যই জানাচ্..

ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তায় আসছে নতুন যুগ। চীন ও পাকিস্তান সীমান্ত ঘিরে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে, দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সীমান্ত রক্ষা সংস্থা বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) একযোগে বিশাল আকারের নিরাপত্তা কাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছে।

দ্য ইকোনমিক টাইমস-এ প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিএসএফ-এর জন্য নতুন করে ১৬টি ব্যাটালিয়ন গঠনের নীতিগত অনুমোদন ইতোমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, সীমান্তে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর সক্ষমতা বাড়াতে গঠন করা হচ্ছে দুটি নতুন ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’—একটি ভারতের পূর্বাঞ্চলের মিজোরাম রাজ্যে, অপরটি পশ্চিমাঞ্চলের জম্মু অঞ্চলে।

এই পরিকল্পনার আওতায় বিএসএফ-এ যুক্ত করা হবে প্রায় ১৭ হাজার নতুন সৈন্য। এসব সৈন্যকে পর্বত, নদী, বনাঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সীমান্তের কঠিন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালনের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই পুরো নিয়োগ ও অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ ধাপে ধাপে আগামী ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

কেন এত বড় উদ্যোগ নিচ্ছে ভারত?

গত এক দশকে ভারতের সীমান্ত এলাকায় নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। চীন সীমান্তে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষ, পাকিস্তান সীমান্তে জঙ্গি অনুপ্রবেশ, ড্রোনের মাধ্যমে অস্ত্র পাচার, এবং মাদক চোরাচালান—সব মিলিয়ে বিএসএফ ও অন্যান্য সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর চাপ বেড়েছে বহুগুণ। বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে মিয়ানমার ও চীনের সংযোগ থাকায় ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এই বাস্তবতা থেকেই বিএসএফ-এর সক্ষমতা বাড়াতে এই নতুন ব্যাটালিয়ন ও হেডকোয়ার্টার স্থাপনের সিদ্ধান্ত এসেছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।

নতুন ব্যাটালিয়ন ও হেডকোয়ার্টার কোথায় হবে?

নতুন ১৬টি ব্যাটালিয়ন ছড়িয়ে থাকবে ভারতের বিভিন্ন স্পর্শকাতর সীমান্তে—যেমন:

  • পূর্বাঞ্চল: মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ

  • পশ্চিমাঞ্চল: জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব, রাজস্থান

  • দক্ষিণ সীমান্ত: মাদক ও মানব পাচার প্রতিরোধে কিছু ব্যাটালিয়ন তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ সীমান্তেও ব্যবহার করা হতে পারে

মিজোরামে স্থাপিত ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার মূলত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ ও গোয়েন্দা তৎপরতার কেন্দ্র হবে, আর জম্মুর হেডকোয়ার্টার পশ্চিম সীমান্তে বিএসএফ পরিচালনায় কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখবে।

বিশেষ প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ

নতুন ব্যাটালিয়নগুলোতে শুধুমাত্র জনবলই নয়, বরং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারও নিশ্চিত করা হবে। এর মধ্যে থাকবে:

  • স্মার্ট সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম

  • ড্রোন মনিটরিং

  • থার্মাল ইমেজিং

  • ইন্টেলিজেন্ট কমিউনিকেশন টাওয়ার

সৈন্যদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সীমান্ত চোরাচালান, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং জরুরি অবস্থায় দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য।

রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক বার্তা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের এই পদক্ষেপ শুধু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নয়, বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও একটি বার্তা দিচ্ছে—“ভারত তার সীমান্তে কোনো ধরনের হুমকি সহ্য করবে না।” এতে প্রতিবেশী দেশগুলোকে সংযত থাকার বার্তা যেমন আছে, তেমনি দেশটির নাগরিকদের মধ্যেও নিরাপত্তাবোধ দৃঢ় করার চেষ্টা রয়েছে।


 

ভারত সরকারের এই নতুন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আগামী পাঁচ বছরে এর বাস্তবায়ন শুধু সীমান্ত নিরাপত্তাই নয়, বরং দেশটির কৌশলগত প্রস্তুতির মানদণ্ডও নির্ধারণ করবে।

এই পরিকল্পনার পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে, বিএসএফ হবে আরও আধুনিক, গতিশীল এবং প্রযুক্তিসম্পন্ন একটি বাহিনী, যা দেশের ১৫,১০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তজুড়ে আরও বেশি দক্ষতার সঙ্গে সেবা দিতে পারবে।

No comments found