চীনের পক্ষ থেকে ভারতবিরোধী সহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। তিনি একে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বাস্তববিরোধী বলে আখ্যা দেন।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির ভারতীয় অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘাতের সময় পাকিস্তান চীনের পক্ষ থেকে সরাসরি সামরিক সহায়তা পেয়েছে। তিনি এই অভিযোগকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বাস্তববিরোধী’ বলে উল্লেখ করেছেন।
সোমবার (৭ জুলাই) ইসলামাবাদে ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি’-তে জাতীয় নিরাপত্তা ও যুদ্ধ কৌশল বিষয়ক একটি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে তিনি বলেন, “যে কোনো জাতীয় নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক আলোচনায় এমন ভিত্তিহীন বক্তব্য জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এবং প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির ইন্ধন দেয়।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল সিং সম্প্রতি দাবি করেন যে, চীন পাকিস্তানকে গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় সেনা অবস্থান সম্পর্কে সরাসরি গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছে। এই দাবির প্রেক্ষিতেই আসিম মুনির কড়া প্রতিক্রিয়া আসে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান তার নিরাপত্তা ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত স্বকীয়ভাবে নেয়। আমাদের সামরিক বাহিনী জাতীয় স্বার্থের বাইরে কোনো শক্তির উপর নির্ভরশীল নয়। বহিরাগত শক্তির সহায়তা সংক্রান্ত যে কোনো বক্তব্য বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে বহু দশক ধরে কৌশলগত সম্পর্ক বিরাজমান। পাকিস্তানের অবকাঠামো ও জ্বালানি খাতে চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ কয়েক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। তবে পাকিস্তান বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছে, দুই দেশের বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও সামরিক কৌশলে তারা সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন।
উল্লেখ্য, গত মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চার দিনব্যাপী সংঘর্ষে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও কামানের গোলা ব্যবহার করা হয়। এটিকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সীমান্ত সংঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, চীনের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর দুই দেশের মধ্যে সামরিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কিছুটা উত্তেজনা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান ও চীনের সম্পর্ক যতই ঘনিষ্ঠ হোক না কেন, সরাসরি সামরিক সহায়তার অভিযোগ কূটনৈতিক জটিলতা বাড়াতে পারে। তবে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের এই স্পষ্ট ভাষণের মাধ্যমে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।