পাকিস্তান-ভারত আকাশসীমা উত্তেজনা: আরও এক মাস আকাশপথ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত
দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার কারণে পাকিস্তান আবারও ভারতের জন্য তার আকাশসীমা বন্ধের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাকিস্তানের উচ্চপদস্থ সূত্রের বরাতে জিও নিউজ জানায়, চলতি মাসের শেষেই বর্তমান নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, সেটিকে আরও এক মাস বাড়ানো হচ্ছে। সিদ্ধান্তটি আগামী সপ্তাহ থেকেই কার্যকর হবে।
পাকিস্তানের এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট রুটগুলোতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে দিল্লি, মুম্বাই, অমৃতসর এবং আহমেদাবাদ থেকে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকার গন্তব্যে যাওয়ার পথে যে ভারতীয় বিমানেরা প্রতিদিন পাকিস্তানের আকাশ ব্যবহার করে, তাদের সংখ্যা ২০০ থেকে ৩০০-র মতো। এই ফ্লাইটগুলোর বড় অংশকেই বিকল্প রুট গ্রহণ করতে হতে পারে, যার ফলে সময় ও জ্বালানি ব্যয় উভয়ই বাড়বে।
উত্তেজনার সূত্রপাত: পহেলগামের পর্যটক হত্যাকাণ্ড
এই পদক্ষেপের পেছনে মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে গত মাসে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীর হামলার ঘটনাকে। ঐ হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটক নিহত হন। ঘটনাটি ভারতের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ২৩ এপ্রিল একতরফাভাবে পাকিস্তানের জন্য তার আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়।
এই সিদ্ধান্তের জবাবে পরদিনই পাকিস্তানও ভারতের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। তবে এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক বা সামরিক স্তরে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, “যে কারণগুলো আমাদের এই কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছিল, সেগুলোর কোনো উন্নতি আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি না।”
আন্তর্জাতিক নিয়ম এবং আইসিএও-র বাধ্যবাধকতা
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইসিএও)-র নিয়ম অনুযায়ী, কোনো সদস্য রাষ্ট্র একটানা এক মাসের বেশি সময় ধরে আকাশসীমা বন্ধ রাখতে পারে না। তবে যদি দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি বা কৌশলগত স্বার্থ বিপন্ন হয়, তাহলে তারা প্রতি মাসে একটি নতুন নোটিশ টু এয়ার মেন (NOTAM) জারি করে সময়সীমা বাড়াতে পারে।
পাকিস্তানের বিমান পরিবহন বিভাগ জানায়, তারা বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নতুন নোটিশ জারি করবে। এই নোটিশের মাধ্যমে বিমান সংস্থাগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হবে যে, ভারতের জন্য আকাশসীমা আরও এক মাসের জন্য বন্ধ থাকবে।
জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সিদ্ধান্ত
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (NSC) ২৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্তটি ২৩ মে পর্যন্ত কার্যকর ছিল। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সময়সীমা আরও এক মাসের জন্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, অর্থাৎ আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত ভারতের কোনো বাণিজ্যিক বা প্যাসেঞ্জার বিমান পাকিস্তানের আকাশ ব্যবহার করতে পারবে না।
বিমান চলাচলে প্রভাব
প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ৩০০টি ভারতীয় বিমান পাকিস্তানের আকাশসীমা পাড়ি দেয়। এসব বিমানের মধ্যে রয়েছে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আমেরিকার বহু গন্তব্যে চলাচলকারী উড়োজাহাজ। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিকল্প রুট ব্যবহার করতে হলে একেকটি বিমানের ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৯০ মিনিট পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। এতে জ্বালানি খরচ এবং যাত্রীদের সময় ক্ষয় উভয়ই বাড়বে।
ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনা অব্যাহত থাকলে আকাশসীমা বন্ধের এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতেও দীর্ঘায়িত হতে পারে। এতে শুধু ভারত ও পাকিস্তান নয়, গোটা দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল ব্যবস্থা বিঘ্নিত হবে।
দুই দেশের সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান—তারা যেন দ্রুত এই সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং বেসামরিক যাত্রী ও বৈশ্বিক পরিবহন ব্যবস্থার স্বার্থে আকাশপথকে রাজনীতির বলি না বানায়।
এই প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ:
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের চলমান উত্তেজনা আরও এক ধাপ বেড়েছে পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে। এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে বড় প্রভাব পড়বে এবং ভবিষ্যতেও এই অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।