close
লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!
ভারতে নরেন্দ্র মোদি সরকার হঠাৎ করেই অবৈধ অভিবাসী নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। চলতি বাজেট অধিবেশনে ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স’ বিল পেশ করা হবে, যার লক্ষ্য অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করা অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণ করা। একই সঙ্গে, মুসলমানদের ধর্মীয় সম্পত্তির ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করতে বিতর্কিত ‘ওয়াক্ফ বিল’ও তোলা হচ্ছে সংসদে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, এই পদক্ষেপের আসল উদ্দেশ্য ধর্মীয় মেরুকরণকে আরও তীব্র করা।
নতুন অভিবাসন বিল: কী বলছে সরকার?
প্রস্তাবিত ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স’ বিলের মাধ্যমে ব্রিটিশ আমলের তিনটি পুরোনো আইন— ‘ফরেনার্স অ্যাক্ট (১৯৪৬)’, ‘পাসপোর্ট এন্ট্রি ইন্টু ইন্ডিয়া অ্যাক্ট (১৯২০)’, এবং ‘রেগুলেশন অব ফরেনার্স অ্যাক্ট (১৯৩৯)’ বাতিল করা হবে। পরিবর্তে নতুন আইন এনে অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড়ের বিধান আরও কঠোর করা হবে। সরকারিভাবে বিলটি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি, তবে সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই বিল মূলত বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী ও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে।
বিরোধী মহলের আশঙ্কা, মুসলমানদের চিহ্নিত করতেই এই বিল আনা হচ্ছে। সরকারের এ উদ্যোগকে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক বলে মনে করছেন সমালোচকরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিল বাস্তবায়িত হলে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর মুসলমানরা সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়বেন।
ওয়াক্ফ বিল: ধর্মীয় সম্পত্তির ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ?
সরকার শুধু অভিবাসন আইনেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, তারা ‘ওয়াক্ফ বিল’ও আনতে চলেছে, যার ফলে মসজিদ, মাজারসহ মুসলমানদের ধর্মীয় সম্পত্তির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়বে। সংসদীয় যুগ্ম কমিটির কাছে পাঠানো এই বিল নিয়ে বিরোধীরা তীব্র আপত্তি জানালেও বিজেপি নেতৃত্বাধীন কমিটি কোনো সংশোধনী গ্রহণ করেনি। বরং সরকারের পক্ষ থেকেই কিছু সংশোধনী যোগ করা হয়েছে। এই বিল আইনে পরিণত হলে মুসলমানদের ধর্মীয় সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় সরকারের হস্তক্ষেপ সহজ হবে, যা ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আঘাত বলে মনে করছেন বিরোধীরা।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কি?
বিশ্লেষকদের মতে, এই বিলগুলোর পেছনে স্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে বিহার বিধানসভার নির্বাচন এবং ২০২৬ সালের মার্চ-এপ্রিলে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগেই সরকার ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স বিল’ পাস করাতে চাইছে, যাতে ধর্মীয় মেরুকরণকে আরও উসকে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা যায়।
বিরোধীদের মতে, বিজেপি সরকার বরাবরই ধর্মীয় বিভাজনকে ব্যবহার করে ভোটের ময়দানে সুবিধা নিতে চায়। ২০১৯ সালে পাশ হওয়া বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA)-এর মতোই নতুন অভিবাসন বিলের লক্ষ্যও মুসলিম অভিবাসীদের বঞ্চিত করা।
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
বিরোধী দলগুলোর দাবি, ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স’ বিল মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য আনা হয়েছে। ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের এক নেতার মতে, “এই বিলের মাধ্যমে সরকার আসলে নির্দিষ্ট একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে চাইছে। এটি শুধু অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের বিষয় নয়, বরং একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত।”
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতা বলেছেন, “বিজেপি সরকার নির্বাচনের আগে এই ধরনের বিল এনে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চায়। অভিবাসন একটি বাস্তব সমস্যা হলেও, এর সমাধান হওয়া উচিত সামগ্রিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে, নির্দিষ্ট ধর্মকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে নয়।”
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বিলটি সংসদে তোলা হলে তা নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের মতো রাজ্যগুলোর রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর এর বড় প্রভাব পড়তে পারে। যদি বিলটি পাস হয়, তবে মুসলিম অভিবাসীদের ওপর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। পাশাপাশি, ওয়াক্ফ বিল পাস হলে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সম্পত্তির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর হবে।
বিরোধীরা ইতিমধ্যে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদি এই বিল পাস হয়, তবে এটি ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন এক ধর্মীয় বিভাজনের সূচনা করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, মোদি সরকার কত দ্রুত ও কীভাবে এই আইনগুলো বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়।
Walang nakitang komento