ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নতুন যুদ্ধ!

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে ভারত-পাকিস্তান, কিন্তু সংঘর্ষ থামলেও শুরু হয়েছে আরেকটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধ—মতাদর্শ, দোষারোপ ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির এক অদৃশ্য লড়াই।..

দক্ষিণ এশিয়ার দুই চিরবৈরী প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান আবারও যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছিল। তবে এ যাত্রায় সামরিক সংঘর্ষের ইতি টেনেছে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ। যদিও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে কাগজে-কলমে, বাস্তবে দুই দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে এক নতুন যুদ্ধ—‘বর্ণনার যুদ্ধ’। কে শুরু করল, কে থামল, কে জিতল—এই লড়াইয়ের জবাব খুঁজছে আন্তর্জাতিক মহল।

গত ২২ এপ্রিল, ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পাহেলগামে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় ২৬ জন। ভারত সরাসরি পাকিস্তানের দিকে আঙুল তোলে, অভিযোগ করে সীমান্ত পেরিয়ে আসা জঙ্গিদের এই হামলার জন্য দায়ী। তবে কোনো ধরনের তদন্ত বা তথ্য প্রমাণ ছাড়াই এই অভিযোগে পাকিস্তান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় এবং নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি তোলে।

তবে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়, যখন ভারত সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ড্রোন হামলা চালায়। এতে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনা ঘটে। উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। উভয় পক্ষ থেকেই সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে—দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র কি সত্যিই পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়াচ্ছে?

এই অবস্থায় হস্তক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানান, দুই দেশের মধ্যে একটি “সম্পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি” কার্যকর হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধবিরতির ঘোষণা সত্ত্বেও উভয় দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধবিরতির পেছনে কূটনৈতিক চাপে পিছু হটার কৌশল লুকিয়ে আছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এর বিশ্লেষক জেসন বার্ক মত প্রকাশ করেন, “এই শান্তি আনার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিঃসন্দেহে মুখ্য। তবে এই পরিস্থিতিতে চীন ও রাশিয়ার অসন্তোষও উপেক্ষণীয় নয়। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বৈদেশিক চাপই মূল চালিকাশক্তি।”

আল জাজিরা জানিয়েছে, “মোদি সরকার এই সংঘাতে একপ্রকার কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ট্রাম্পের মধ্যস্থতা মেনে নেওয়ার মাধ্যমে ভারতের বহুদিনের ‘কাশ্মীর নীতি’ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।”

ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যার আরও গভীরভাবে ব্যাখ্যা করেছে—যদিও যুদ্ধবিরতির আলোচনায় কোনো বাইরের পক্ষ সরাসরি ছিল না, কিন্তু পর্দার আড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত চাপেই দুই দেশের সেনাবাহিনী আলোচনায় বসে। বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

অন্যদিকে টাইম ম্যাগাজিন বিশ্লেষণে জানিয়েছে, “মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো আগে পাকিস্তানের প্রতি ধর্মীয় কারণে সহানুভূতিশীল ছিল। কিন্তু বর্তমানে ভারতের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত বলয় এতটাই বিস্তৃত যে, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অনেক দেশই নিরপেক্ষ ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করছে।”

স্কাই নিউজ সরাসরি সতর্ক করে বলেছে, “গত দুই সপ্তাহে সীমান্তে যে ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে, তা গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হলেও, স্থায়ী শান্তির আশা করা বাস্তবতা নয়।”

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের বিশ্লেষণে মন্তব্য করেছে, “যুদ্ধবিরতি এখন কাগজে আছে, বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে, সেটা সময় বলবে। ভারত ও পাকিস্তান দু'দেশই যেমন যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তেমনি একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের অবস্থানকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।”

সবশেষে বলা যায়—যুদ্ধবিরতি আপাতত শান্তির আশ্বাস দিলেও, দুই দেশের ভেতরে চলতে থাকা রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ, ক্ষমতা প্রদর্শনের চেষ্টা ও দীর্ঘ দিনের বৈরিতা এখনও শান্তির পথে বড় বাধা। সামরিক সংঘাত হয়তো থেমেছে, কিন্তু শুরু হয়েছে কূটনীতির যুদ্ধ, মতাদর্শের যুদ্ধ, এবং জনমতকে নিয়ন্ত্রণের অদৃশ্য এক তীব্র সংঘর্ষ।

Geen reacties gevonden