ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলতি বছরের মে মাসের শুরুতে হওয়া চার দিনের সীমান্ত সংঘর্ষে ভারতের বিমান বাহিনী একটি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত শাংরি-লা ডায়ালগ নিরাপত্তা সম্মেলনে শনিবার (৩১ মে) এই তথ্য জানান তিনি।
জেনারেল চৌহান বলেন, “আমরা সংঘর্ষের শুরুতে কিছু ক্ষতির মুখে পড়েছিলাম। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, কেন এই ক্ষতি হলো এবং ভবিষ্যতে আমরা কীভাবে তা প্রতিরোধ করব।” রয়টার্স এবং ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া একাধিক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ বছরের ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর এক প্রাণঘাতী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। ভারত ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করে।
পরবর্তী চার দিন—৭ থেকে ১০ মে—দুই দেশের সীমান্ত জুড়ে ব্যাপক গোলাগুলি, ড্রোন হামলা ও আর্টিলারি আগ্রাসন চলে। এ সময়ে দুই পক্ষের দাবি অনুসারে অন্তত ৭০ জনের বেশি নিহত হন। ভারত দাবি করেছে, পাকিস্তানে চালানো 'নির্ভুল হামলায়' ১০০ জনের বেশি সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছে। পাকিস্তান পাল্টা দাবি করে, ওই হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক।
ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের হামলায় জম্মু-কাশ্মীরে অন্তত ২৪ জন বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
পাকিস্তান দাবি করেছিল, তারা অন্তত পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে তিনটি ছিল ফ্রান্সে তৈরি রাফাল। তবে জেনারেল চৌহান এই দাবিকে “সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন” আখ্যা দিয়ে বলেন, “আমরা শুধুমাত্র একটি বিমান হারিয়েছি।”
তিনি আরও জানান, সংঘর্ষের প্রথম দিন ভারতের বিমান বাহিনী কিছু ক্ষতির মুখে পড়ায় কৌশলগত পরিবর্তন আনা হয়। এরপর ৭, ৮ ও ১০ মে ভারত বড় পরিসরে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানের ভেতরে বিমানঘাঁটিগুলোতে সুনির্দিষ্ট হামলা চালায়।
সংঘর্ষের সময় চীনের সম্ভাব্য সহযোগিতা নিয়ে জিজ্ঞাসায় জেনারেল চৌহান জানান, উত্তর সীমান্তে তেমন কোনো অস্বাভাবিক চীনা সামরিক তৎপরতা তারা লক্ষ্য করেননি। তবে পাকিস্তানের প্রতি চীনের ঘনিষ্ঠতা এবং স্যাটেলাইট চিত্র বা গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান নিয়ে তিনি বলেন, “এই ধরনের চিত্র বা তথ্য বাণিজ্যিকভাবেও পাওয়া যায়। তাই এটি চীন বা অন্য কোনো উৎস থেকেও সংগ্রহ করা সম্ভব।”
জেনারেল চৌহান স্পষ্ট করে বলেন, “যুদ্ধ থেমে গেলেও ভারত তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে—পাকিস্তানের মাটি থেকে ভবিষ্যতে কোনো সন্ত্রাসী হামলা হলে তার কঠোর ও সুনির্দিষ্ট জবাব দেওয়া হবে।”
এ সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর এয়ার মার্শাল একেএ ভারতী বলেন, “যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কিছু ক্ষতি হতেই পারে, তবে আমাদের সব পাইলট নিরাপদে ফিরে এসেছে।”