close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ভারত-পাকিস্তান: যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে?

আব্দুল্লাহ আল মামুন avatar   
আব্দুল্লাহ আল মামুন
অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, বিজেপি সরকার অতীতেও নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সুতরাং, প্রকৃত শান্তি কেবল কূটনৈতিক সাহস..

দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব এক চিরচেনা রূপ নিয়েছে। কিন্তু ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে এই দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা এমন এক স্তরে পৌঁছেছে যা বিশ্ববাসীর মনে বাস্তব যুদ্ধের আশঙ্কা জাগিয়েছে। দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশের মুখোমুখি অবস্থান গোটা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এই নিবন্ধে আমরা বিশ্লেষণ করব বর্তমান পরিস্থিতির পটভূমি, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি এবং সম্ভাব্য পরিণতি।

কাশ্মীর দীর্ঘদিন ধরেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধের মূল কেন্দ্র। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্তির পর থেকে দুই দেশ কাশ্মীর নিয়ে তিনটি যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়ে। ২০১৯ সালে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের প্যাহেলগামে একটি ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক নিহত হন। ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করে এবং দুইজন সন্দেহভাজন পাকিস্তানিকে গ্রেফতার করে।

পাকিস্তান পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় দাবি করে এটি একটি 'ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন', অর্থাৎ ভারতীয় গোয়েন্দাদের সাজানো নাটক। এক পর্যায়ে কাশ্মীর রেজিস্টেন্স নামের একটি গোষ্ঠী দায় স্বীকার করলেও পরে তা অস্বীকার করে এটিকে ভারতীয় ষড়যন্ত্র হিসেবে তুলে ধরে।

২৩ এপ্রিল ভারত ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে, যা পাকিস্তানের জন্য এক গভীর সংকেত। একই দিনে পাকিস্তানিদের জন্য ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা বাতিল এবং আত্মারি সীমান্ত বন্ধ করে দেয় ভারত। প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে, কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করে। পরের দিন তারা শিমলা চুক্তিও স্থগিত ঘোষণা করে এবং প্রতিদিনের আত্মারি-ওয়াগা সৌহার্দ্য অনুষ্ঠানও বন্ধ করে দেয়।

২৪ থেকে ২৯ এপ্রিল নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর শুরু হয় টানা গোলাগুলি। পাকিস্তান দাবি করে একটি ভারতীয় ড্রোন তারা ধ্বংস করেছে, অন্যদিকে ভারত সফলভাবে একটি নৌবাহিনীর মিসাইল ধ্বংসের পরীক্ষা চালায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা দেন “আতঙ্কবাদী আশ্রয়স্থল ধ্বংস হবে, শাস্তি আসন্ন”। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ পাল্টা হুঁশিয়ারি দেন যে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারত হামলা চালাতে পারে।

কাশ্মীরে ভারত ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে, ১৫০০ জনকে গ্রেফতার করে এবং ৪৮টি পর্যটন এলাকা বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক আইনে আশ্রয় নেওয়ার প্রস্তুতি নেয়।

যুদ্ধের শঙ্কা এতটাই প্রকট হয় যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং চীন পাকিস্তানে অবস্থানরত কূটনীতিকদের পরিবার সরিয়ে নিতে শুরু করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারত-পাকিস্তানকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানায়। চীন নিরপেক্ষ তদন্ত চায়, ইরান মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয়, আর জাতিসংঘ, সৌদি আরব ও তুরস্ক কূটনৈতিক আলোচনা চায়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই উত্তেজনা কয়েকটি সম্ভাব্য পথে যেতে পারে:

  1. পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ: যদিও দুটি দেশই পরমাণু শক্তিধর, তবুও প্রচলিত যুদ্ধ (non-nuclear) সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত, খাদ্য-জ্বালানির সংকট ও মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

  2. সীমিত সংঘাত: পুলওয়ামা হামলার পর ২০১৯ সালে ভারত যে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছিল, তেমনি সীমান্তে ছোট আকারের সামরিক অভিযান ঘটতে পারে।

  3. কূটনৈতিক সমাধান: আন্তর্জাতিক চাপ, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের হস্তক্ষেপ এবং জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আলোচনা হলে উত্তেজনা প্রশমিত হতে পারে। যদিও উভয় দেশের মধ্যে অবিশ্বাসের দেয়াল অত্যন্ত শক্ত।

বর্তমান পরিস্থিতি একটি জটিল ও সংবেদনশীল স্তরে অবস্থান করছে। ইতিহাস বলছে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক বারবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, বিজেপি সরকার অতীতেও নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সুতরাং, প্রকৃত শান্তি কেবল কূটনৈতিক সাহস, আন্তরিকতা এবং জনগণের চাওয়াকে গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমেই সম্ভব।

Nema komentara


News Card Generator