কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের পর ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেল পারকি সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত এ সৈকত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ।
স্থানীয়রা সৈকতের চেয়ে একে বেশি চেনে ঝাউবাগান হিসেবে; অর্থাৎ এখানে সৈকত তো আছেই, আছে বিশাল ঝাউবাগান। সঙ্গে আছে সমুদ্রের বিস্তৃত জলরাশি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামের জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র পারকি সমুদ্র সৈকত নিয়ে চলছে নানামুখি আলোচনা। যারা আগে এসেছেন, তাদের কাছে এখন অনেকটাই অচেনা হয়ে পড়েছে আকর্ষণীয় এ সৈকতটি। দেশী বিদেশী পর্যটকদের কাছে চরম আকর্ষণের পারকির চর এখন অন্যরকম। ভরা মৌসুমেও মানুষের পদভারে সেই জমজমাট অবস্থা নেই। নেই সেই হাকডাক-জাঁকজমক অবস্থা। নানা সমস্যাও যেন জেঁকে বসে অযাচিত প্রতিবন্ধকতায় চরটি হারিয়ে ফেলছে তার সৌন্দর্য। আর চরের ব্যবসায়ীরাও মুখোমুখি হয়েছেন কঠিন জীবনযুদ্ধে।
বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে পর্যটক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১ কিলোমিটারের বেশি এলাকা জুড়ে সৈকতের মূল আকর্ষণ সারি সারি ঝাউ গাছের গোড়ার মাটি সরে গিয়ে উপড়ে পড়েছে। বালুচর ও সারি সারি ঝাউ গাছের করুণ পরিণতিতে সৈকতের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পর্যটক ও স্থানীয়রা। বর্তমানে সৈকতের চরের বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি উঠানামার কারণে খালে পরিনত হয়েছে সৈকতের চর। দেখে মনে হবে এই যেন এক যুদ্ধে ধ্বংসের অংশের ময়দানে। এছাড়াও সৈকতের বর্তমান অবস্থার কারণে স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়ে পর্যটকদের আগ্রহে দিনদিন ভাটা পড়ছে। সেই সাথে সৈকতের পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নজরদারি ও কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায় দর্শনার্থী ও স্থানীয় সচেতন মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় পর্যটক আবদুর নুর (২৮) বলেন, পারকি সমুদ্র সৈকতে মাছের ঘের ব্যবসায়ীদের এতো অত্যাচারেও স্থানীয় প্রশাসন, পর্যটন কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তর সু-নজর দেয়নি। যার ফলে এ করুণ দর্শা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে পারকি সমুদ্র সৈকতটি।
সৈকতের ব্যবসায়ী কাজী জাফর আহমেদ বলেন, গত কয়েক বছর ধরেও সৈকতের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ভাঙন রোধে কেউ নেয়নি কোনো পদক্ষেপ। ব্যবসায়ীদের মধ্যেও মন্দভাব বিরাজ করছে। জানি না ভবিষ্যতে সৈকতের কী হাল হবে?’ কমতে শুরু করেছে পর্যটকও। অনেক পর্যটক চরের দৃশ্য দেখে ফিরে যান।’
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের আনোয়ারার দায়িত্বে থাকা উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক বলেন, ইতিমধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকা গুলোতে জিও ব্যাগ বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। সাপমারা খালের মুখ থেকে পারকি সৈকত পর্যন্ত ২.৭ কিলোমিটার এলাকার ভাঙন রোধে একটি সুপার ডাইক নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এটি বাস্তবায়ন হলে পারকি সৈকত সুরক্ষিত হবে।’
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘পারকি সমুদ্র সৈকত রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’