close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ভালো বন্ধু কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়ায়, জাপান সেই বন্ধু : ড. ইউনূস..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
টোকিওতে অনুষ্ঠিত ব্যবসা সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, বাংলাদেশ এক বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়ে গেছে, এবং সেই ভাঙনের মাঝেই একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার চেষ্টায় জাপান..

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনে জাপানের পূর্ণ সহযোগিতা কামনা করেছেন। জাপানকে তিনি এমন এক বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যে শুধু সুসময়েই নয়, বরং গভীর সংকটে প্রকৃতভাবে পাশে দাঁড়ায়।

টোকিওর জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) সদর দপ্তরে আয়োজিত "বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার"-এ বক্তৃতাকালে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন। জেট্রো এবং জাইকা যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। উপস্থিত ছিলেন জাপানি সরকারের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ উপদেষ্টারা।

ড. ইউনূস বলেন,

“আমি এখানে এসেছি কৃতজ্ঞতা জানাতে এবং ভবিষ্যতের পথনকশা ঠিক করতে। বাংলাদেশ একটি ১৬ বছরের দীর্ঘ ভূমিকম্প পার করেছে। এখন আমরা ছিন্নভিন্ন অবকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠনের চেষ্টায় রয়েছি।”

তিনি আরও বলেন,

“আমাদের এখন প্রয়োজন এমন বন্ধুদের, যারা অসম্ভবকে সম্ভব করার স্বপ্নে আমাদের পাশে দাঁড়াবে। জাপান সেই বন্ধু—যারা কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে পাশে দাঁড়ায়।”

তিনি নতুন বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক সংগ্রাম এর কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন,

“আমরা প্রমাণ করতে চাই—একটি উন্নত, মানবিক, কার্যকর রাষ্ট্র গড়া সম্ভব। আমরা সেই ভিত্তি ইতোমধ্যেই তৈরি করেছি, এখন প্রয়োজন জাপানের মতো বিশ্বস্ত সহযোগীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ।”

ড. ইউনূস জাপানের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন, বিশেষ করে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে জাপানের অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন,

“এটি শুধু একটি প্রকল্প নয়, এটি একটি জাতির অর্থনৈতিক ভিত্তি নির্মাণ। এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, বরং নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্যও প্রবেশদ্বার। মাতারবাড়ি এখন দক্ষিণ এশিয়ার ‘গেটওয়ে টু দ্য ওয়ার্ল্ড’।”

এ সময় জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প বিষয়ক পার্লামেন্টারি ভাইস মিনিস্টার তাকেউচি শিনজি বলেন,

“বাংলাদেশ একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। এটি এশিয়ার সংযোগস্থল এবং জাপান দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখতে চাই।”

তাকেউচি আরও জানান, জাপান তার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহ দিচ্ছে এবং দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক দিন দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে।

ড. ইউনূস তাঁর বক্তব্যে জাপানি কোম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশের সম্ভাবনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন,

“বাংলাদেশে এখন একটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ রয়েছে। টেক্সটাইল ছাড়াও স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, অবকাঠামো ও নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে জাপানি বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে উভয় দেশের জন্যই তা লাভজনক হবে।”

তিনি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিধি ও বৈচিত্র্য বাড়ানোর আহ্বান জানান এবং বলেন,

“টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য বহুমুখী বিনিয়োগ এবং অংশীদারিত্ব অপরিহার্য।”

উক্ত সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন—পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং টোকিওতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী


 

টোকিওর আলোচনায় উঠে এলো একটি দেশ পুনর্গঠনের সাহসী আহ্বান এবং এক বিশ্বস্ত বন্ধুর কাছে প্রত্যাশা। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্যপথে, জাপানের ভূমিকাই হতে পারে সেই মোড়বদলের চাবিকাঠি—ঠিক যেমনটা একজন ভালো বন্ধু করে কঠিন সময়ে।

Aucun commentaire trouvé


News Card Generator