close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

বগুড়ায় নরসুন্দর সংকট: বাপ-দাদার পেশা ছাড়ার হিড়িক

মিনহাজুল বারী avatar   
মিনহাজুল বারী
****

মিনহাজুল বারী, বগুড়াঃ 
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বালুয়াহাটের সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন বিলুপ্তির পথে। হাটের কোলাহলের মাঝে, রাস্তার ধারে গাছের ছায়ায় একটি টুল, সামনে ছোট আয়না আর কাঠের বাক্সে রাখা ক্ষুর-কাঁচি নিয়ে বসে থাকা নরসুন্দরের নিপুণ হাতের কাজ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। একসময়ের গ্রামীণ জীবনের অপরিহার্য এই হাটুরে সেলুনগুলো আধুনিকতার দাপটে আজ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।
একসময় উপজেলার এই বালুয়াহাটে গেলেই দেখা যেত, সারিবদ্ধভাবে বসে আছেন নরসুন্দররা। তাদের ঘিরে থাকত চুল-দাড়ি কাটার অপেক্ষায় থাকা মানুষের ভিড়। স্বল্প খরচে পরিপাটি হওয়ার পাশাপাশি এটি ছিল গ্রামের মানুষের গল্পগুজব, ভাবের আদান-প্রদান আর সামাজিক আলোচনার এক মিলনকেন্দ্র। হাটের দিনে চুল কাটতে আসা মানুষের আনাগোনায় এই স্থানটি মুখর থাকত।
কিন্তু সময় বদলেছে। এখন সোনাতলার গ্রামগুলোতেও গড়ে উঠেছে আধুনিক সাজসজ্জার সেলুন। যেখানে রয়েছে আরামদায়ক ঘূর্ণি চেয়ার, বড় আয়না, নানা ধরনের প্রসাধনী এবং চুল কাটার অত্যাধুনিক সরঞ্জাম। ফলে নতুন প্রজন্মের তরুণরা এখন আর খোলা আকাশের নিচে ধুলাবালির মধ্যে চুল কাটাতে আগ্রহী নন। তারা পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও নতুন হেয়ারস্টাইলকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন।
বালুয়াহাটের পুরনো নরসুন্দর ষাটোর্ধ্ব ত্রিপদ শীল আক্ষেপ করে বলেন, “বাপ-ঠাকুরদার হাত ধরে এই হাটে বসছি প্রায় ৪০ বছর। আগে হাটের দিন ভোরে এসে বসলে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্বাস ফেলার সময় থাকত না। এখন সারাদিনে দুই-চারজন বয়স্ক মানুষ ছাড়া কেউ আসে না। পোলাপান সব শহরের মতো বড় দোকানে যায়। এই আয় দিয়ে আর চলে না, পেশা বদলানো ছাড়া উপায় দেখছি না।”
অন্যদিকে, সোনাতলার একটি কলেজের ছাত্র বলেন, “খোলা জায়গায় চুল কাটাতে এখন আর ভালো লাগে না। তা ছাড়া, এখানকার নাপিতরা আমাদের পছন্দের স্টাইলগুলো ঠিকমতো বোঝেন না। তাই একটু বেশি টাকা লাগলেও আধুনিক সেলুনেই যাই, কারণ সেখানে পরিচ্ছন্নতা ও সেবার মান অনেক ভালো।”

এবিষয়ে লেখক এম রহমান সাগর বলছেন, শুধু বালুয়াহাট নয়,  হাটুরে সেলুন শুধু একটি পেশা নয়, এটি গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত অংশ। অর্থনৈতিক সংকট এবং নতুন প্রজন্মের এই পেশার প্রতি অনাগ্রহের কারণে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি হারাতে বসেছে । যার কারনে নরসুন্দরদের সন্তানেরাও এখন আর পৈতৃক পেশায় না এসে অন্য পেশায় ঝুঁকছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বগুড়া সোনাতলার বালুয়াহাটের মতো দেশের হাজারো হাটের এই চিত্র প্রমাণ করে, আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমরা অনেক কিছু পেলেও, হারিয়ে ফেলছি আমাদের শেকড়ের একেকটি চিহ্ন। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে হয়তো অচিরেই এই হাটুরে সেলুনের গল্প কেবল লোককথায় সীমাবদ্ধ থাকবে।

Keine Kommentare gefunden


News Card Generator