বারবডোজ টেস্ট, প্রথম দিনে পতন ১৪ উইকেটের

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বারবাডোজ টেস্টের প্রথম দিনেই তাণ্ডব! ১৪ উইকেটের পতনে দুই দলের ইনিংস কাঁপলো আগুনে পেসে। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুতেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।..

ক্রিকেট বিশ্বে টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনেই ১৪ উইকেট পতনের মতো নাটকীয়তা খুব কমই দেখা যায়। কিন্তু বারবাডোজে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের সূচনালগ্নেই ঘটল এমন অবিশ্বাস্য এক দৃশ্য।

উত্তাল উইন্ডিজ পেস, ব্যর্থ অজি ব্যাটিং এবং ক্যারিবিয়ান ব্যাটারদের টালমাটাল ইনিংস— সব মিলিয়ে বুধবারের (২৫ জুন) খেলা যেন ছিল উত্তেজনার পরিপূর্ণ এক ট্রেলর! অস্ট্রেলিয়া যেখানে প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছে মাত্র ১৮০ রানে, ওয়েস্ট ইন্ডিজও দিন শেষে ৪ উইকেটে ৫৭ রান করে স্বস্তিতে নেই।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে চরম বিপাকে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজের তরুণ পেসার শামার জোসেফ ও অভিজ্ঞ জেডেন সিলস একপ্রকার ধ্বংস করে দেন সফরকারীদের ব্যাটিং অর্ডার। মাত্র ৫৬.৫ ওভারেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ান ইনিংস।

শুরুটা হয়েছিল ইনিংসের চতুর্থ ওভারে, যেখানে শামার কনস্টাসকে এলবিডব্লিউ করে দেন। এরপর পরই উইকেটের পর উইকেট পতন ঘটতে থাকে। একমাত্র ট্রাভিস হেড ছাড়া কেউই বলার মতো রান করতে পারেননি। হেড করেন ৫৯ রান, উসমান খাওয়াজার সঙ্গে তার ৮৯ রানের জুটি কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলে, কিন্তু তাতেও সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি হয়নি।

সিলস ৫ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা দেখান, তবে সবচেয়ে ভয়ংকর ছিলেন শামার। তার ১৬ ওভারে ৪৬ রানে ৪ উইকেট তুলে নেওয়ার পাশাপাশি, দুইবার প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দেওয়ার মতো স্পেল উপহার দেন — ৬-২-১২-২ ও ৫-০-১২-২।

প্রথম দিনটা কেবল অস্ট্রেলিয়ার বিপর্যয়ের গল্প বললে ভুল হবে। নিজেদের ইনিংস শুরু করেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিকতে পারেনি অজি পেসের সামনে। স্টার্ক, কামিন্স, হেইজেলউডের আগুনে বোলিংয়ে ২০ ওভারেই হারায় ৪ উইকেট। ওপেনার ব্র্যাথওয়েট (৪) ও ক্যাম্পবেল (৭) কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেননি।

কেসি কার্টি কিছুটা লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, কিন্তু ২০ রানেই ফিরে যান। অভিষিক্ত কিং যদিও দিনশেষে অপরাজিত থেকে কিছুটা ব্যাটে বল ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন। চতুর্থ উইকেটে ৫৭ রানে দাঁড় করিয়ে রাখে দিনটি।

শুধু উইকেট সংখ্যা নয়, শামার ও সিলসের আগুনে স্পেল টেস্টের ইতিহাসে তাদের বিশেষ জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। শামার যেমন তার প্রথম দুটি স্পেলে একাই ধ্বংস করেছেন অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডারকে। সিলস পেয়েছেন ১৯ টেস্টে তৃতীয়বার ৫ উইকেট।

যদি উইন্ডিজ ফিল্ডাররা বিশেষ করে অভিষিক্ত কিং তিনটি ক্যাচ না ছাড়তেন, তবে শামারও হয়তো পেয়ে যেতেন পাঁচ উইকেট। তবে তার পরও, প্রথম দিনে ১৪ উইকেট তুলে নেওয়া মানেই দুই দলের বোলিং অ্যাটাকের ভয়াবহতা এবং ব্যাটিংয়ের ভঙ্গুরতা স্পষ্ট।

বারবাডোজের কেনসিংটন ওভাল স্টেডিয়ামে দীর্ঘ তিন বছর পর টেস্ট ম্যাচ হলো। উইকেট দেখতে অনেকটা ন্যাড়া হলেও পুরো দিনজুড়ে বল মুভ করেছে, কখনও মেঘলা আকাশে সুইং, কখনও পিচ থেকে বাড়তি বাউন্স। পেসারদের জন্য ছিল স্বর্গীয় পরিস্থিতি, ব্যাটারদের জন্য তা ছিল বিভীষিকা।

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস:
৫৬.৫ ওভারে ১৮০ (ট্রাভিস হেড ৫৯, খাওয়াজা ৪৭; সিলস ৫/৬০, শামার ৪/৪৬)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস:
২০ ওভারে ৫৭/৪ (কিং ২৩*, কার্টি ২০; স্টার্ক ২/৩৫, কামিন্স ১/৮, হেইজেলউড ১/১৩)

টেস্টের প্রথম দিনেই যেখানে দুই দলের মিলিয়ে ১৪ উইকেট পড়ে যায়, সেখানে বাকি চারদিন যে কী নাটক অপেক্ষা করছে— তা বলা মুশকিল। শুরু থেকেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জমে উঠেছে, আর বারবাডোজের এই ম্যাচ তারই প্রমাণ।

  • শামার ও সিলস কী আবার বোলিং তাণ্ডব চালাতে পারে?

  • কিং ও চেইস কী দলকে উদ্ধার করতে পারবেন?

  • অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিংয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?

ক্রিকেট ভক্তরা নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন— এই টেস্টে জমজমাট উত্তেজনা এখনো অনেক বাকি!

کوئی تبصرہ نہیں ملا