close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

বাংলাদেশের তিন গণভোট

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের পতনের পর দেশে ১৯৯১ সালে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়, কিন্তু তখনও সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতি শাসিত ছিল।..

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রায় পাঁচ দশকে মোট তিনটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার প্রতিটিই ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। এই তিনটি গণভোটই দেশের রাষ্ট্রের দিকনির্দেশনা এবং ক্ষমতা কাঠামোয় স্থায়ী পরিবর্তন এনেছে। এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের সেই তিনটি গণভোটের পেছনের ইতিহাস, বিতর্কিত ফলাফল এবং তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব তুলে ধরে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার দীর্ঘ ইতিহাসে মাত্র তিনটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি গণভোটই দেশের রাজনৈতিক গতিপথ বদলে দিয়েছে—এর মধ্যে একটি ছিল সামরিক শাসনের বৈধতা অর্জনের চেষ্টা, একটি ছিল ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার পথ, আর শেষটি ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রতীক। ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে প্রথম গণভোট অনুষ্ঠিত হলেও, ১৯৯১ সালের শেষ গণভোটটি ছিল তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ, যা বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র স্থায়ীভাবে ফিরিয়ে আনে।

১. প্রথম গণভোট (১৯৭৭): জিয়াউর রহমানের আস্থা যাচাই

  • প্রেক্ষাপট: ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও সামরিক পালাবদল চলছিল। এই অস্থিরতার মধ্যেই মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ধীরে ধীরে দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেন।

  • তারিখ ও প্রশ্ন: জিয়াউর রহমান নিজের নেতৃত্বে জনগণের আস্থা যাচাইয়ের জন্য ১৯৭৭ সালের ৩০ মে প্রথম গণভোটের ঘোষণা দেন। প্রশ্ন ছিল: "আপনি কি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নীতি ও কর্মসূচির প্রতি আস্থা ও সমর্থন প্রকাশ করছেন?"

  • ফলাফল ও প্রভাব: সরকারি হিসেব অনুযায়ী, প্রায় ৮৮ শতাংশ ভোটার অংশ নেয় এবং ৯৮ শতাংশ ভোট 'হ্যাঁ' হিসেবে পড়ে। তবে তখন দেশে সেনাশাসন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় এই ফলাফল নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এই গণভোটের পর জিয়া নিজের অবস্থান আরও শক্ত করেন এবং এক বছর পর নতুন রাজনৈতিক দল বিএনপি গঠন করেন।

২. দ্বিতীয় গণভোট (১৯৮৫): এরশাদের ক্ষমতা বৈধকরণ

  • প্রেক্ষাপট: জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দেশ আবারো সামরিক শাসনের হাতে পড়ে। ১৯৮২ সালে সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন।

  • তারিখ ও প্রশ্ন: ১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ তিনিও জনগণের সমর্থন যাচাইয়ের নামে দ্বিতীয় গণভোটের ঘোষণা দেন। প্রশ্নটি প্রায় আগের মতোই ছিল: "আপনি কি রাষ্ট্রপতি এরশাদের নেতৃত্বে পরিচালিত কর্মসূচির প্রতি আস্থা প্রকাশ করছেন?"

  • ফলাফল ও প্রভাব: সরকারি ফলাফলে প্রায় ৭২ শতাংশ ভোটার উপস্থিত দেখানো হয় এবং ৯৪ শতাংশ ভোটার 'হ্যাঁ' ভোট দেন। বিরোধী দলগুলো এই ভোটকে নাটক বলে অভিহিত করে এবং অভিযোগ করে যে এটি প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর ছত্রছায়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই গণভোটের মাধ্যমে এরশাদ নিজের ক্ষমতাকে আইনগত ও রাজনৈতিক বৈধতা দিতে সক্ষম হন।

৩. তৃতীয় গণভোট (১৯৯১): সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা

  • প্রেক্ষাপট: ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের পতনের পর দেশে ১৯৯১ সালে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়, কিন্তু তখনও সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতি শাসিত ছিল।

  • তারিখ ও প্রশ্ন: সংসদীয় ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ১৯৯১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দেশের তৃতীয় গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। প্রশ্ন ছিল: "আপনি কি সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের পক্ষে?"

  • ফলাফল ও প্রভাব: এই ভোট তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক ছিল। ফলাফলে প্রায় ৮৫ শতাংশ ভোটার সংসদীয় শাসনের পক্ষে রায় দেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে আসে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কমে যায় এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার পরিচালনার ব্যবস্থা স্থায়ী হয়।

لم يتم العثور على تعليقات


News Card Generator