ঢাকা, বৃহস্পতিবার:
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কার কর্মসূচিকে প্রশংসা ও সমর্থনের মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিল যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকায় সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে থাকা উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল এ. চুলিক এবং অ্যান্ড্রু হেরাপ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এই সমর্থনের কথা জানান।
বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মিশন প্রধান ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, এবং পারস্পরিক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের রোহিঙ্গা আশ্রয়নীতি ও মানবিক সহায়তার ভূয়সী প্রশংসা করে। তারা বলেন, "১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে মানবিক নেতৃত্ব দেখিয়েছে, তা বিশ্বের জন্য এক অনন্য উদাহরণ।" এই বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, মিয়ানমার সরকার সম্প্রতি ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিককে রাখাইনে প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা সমস্যাটির সমাধানে একটি বড় অগ্রগতি। তিনি জানান, এ ইস্যুতে বাংলাদেশ গঠনমূলক ভূমিকা রাখছে এবং ভবিষ্যতেও রাখবে।
বৈঠকে মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল এ. চুলিক বলেন, “আপনার দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আপনি রোহিঙ্গা সংকটকে আলাদাভাবে না দেখে সমগ্র মিয়ানমার প্রেক্ষাপটে সমস্যাটি বিবেচনা করছেন, যা একটি কৌশলগত এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ।”
এছাড়া, আঞ্চলিক সহযোগিতা, সংযুক্ততা এবং জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করে মার্কিন প্রতিনিধিদল। তারা আশা প্রকাশ করে, এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে সহায়ক হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সবসময়ই চমৎকার ছিল এবং ভবিষ্যতেও তা আরও জোরদার হবে। তিনি জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আগ্রহ বাংলাদেশের রয়েছে। একই সঙ্গে, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা পুনরায় চালু করায় এবং পালটা শুল্ক আরোপে ৯০ দিনের বিরতি দেওয়ার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এই সফর এবং আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে শুধু দক্ষিণ এশিয়ার একটি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে নয়, বরং একটি মানবিক এবং উন্নয়নমুখী রাষ্ট্র হিসেবেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।