কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ রেল ইঞ্জিন এবং কোচই মেয়াদোত্তীর্ণ। রেলের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ করা হলেও, প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়নের খেসারত দিচ্ছে এই পরিবহন ব্যবস্থা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, দেশে মোট ২,৭৮৯টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৫৬৪টিতে গেটম্যান উপস্থিত। বাকী ক্রসিংগুলোর মধ্যে এক হাজার ৩২১টির অনুমোদনই নেই। এমনকি, অনুমোদিত ক্রসিংগুলোর মধ্যে ৯০৪টি গেটম্যানের অভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হচ্ছে, যেগুলো রেলওয়ের অনুমোদিত নয় এবং সেখানে কোন সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই।
রেলওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, ২০২৪ সালে ট্রেনের কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল এক হাজার ১৭ জন। এর মধ্যে ৫০৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে ট্রেন লাইনে বসে গল্প করার কারণে, ২৭২ জন নিহত হয়েছে অসতর্কভাবে ক্রসিং পারাপারের সময়, এবং ৭৬ জন কানে ইয়ারফোন থাকায় ট্রেনের নিচে পড়ে মারা গেছে। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা আরো বেশি ছিল।
রেলের আইন অনুযায়ী, কোন প্রতিষ্ঠান লেভেল ক্রসিং তৈরি করতে চাইলে রেলওয়ের অনুমতি নিতে হবে। তবে, বেশিরভাগ সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই অনুমতি ছাড়াই ক্রসিং তৈরি করছে। এর ফলে, সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৬৩ শতাংশ রেললাইনই ঝুঁকিপূর্ণ। কাঠের স্লিপার এবং জং ধরা ফিশপ্লেটের উপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। আর ৭০ শতাংশ ইঞ্জিন ও কোচ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায়, যাত্রীদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে, রেলওয়ের অপারেশনাল কাজগুলো অধিকাংশ সময়ে অদক্ষ শ্রমিক দ্বারা করা হচ্ছে, যা দুর্ঘটনা বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ।
বাসের তুলনায় ট্রেন অনেক নিরাপদ মনে হলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রেন যাত্রাও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত দেশগুলোর মতো আমাদের দেশে রেলপথের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন এবং আরো বড় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। যদি এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তাহলে দেশের রেলপথের সুরক্ষা একে একে আরো ভয়াবহ হতে থাকবে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অনুমতি ছাড়াই রেললাইনের ওপর রাস্তা নির্মাণ করছে, যা রেলপথের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংকট সৃষ্টি করছে। তিনি জানান, এসব সমস্যার সমাধান করতে সরকারের উদ্যোগ প্রয়োজন, এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জনবল সংকটেরও সমাধান করতে হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমান অবস্থা এবং এর নিরাপত্তার জন্য একেবারে নির্ভরযোগ্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে আরও জীবনহানি না ঘটে এবং রেলওয়ের সেবা নিরাপদ ও উন্নত হয়।
এখন আপনি দেখতে পারেন, রেলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে জনগণের মধ্যে এক ভয়াবহ উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, তবে তা সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।