close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

বাংলাদেশের আটকে থাকা সম্ভাবনার মুক্তি চাপা ফাইল খুলছে নতুন ইতিহাস..

Bokhtiar Shamim avatar   
Bokhtiar Shamim
আজ বাংলাদেশের সামনে নতুন ইতিহাস লেখার সুযোগ। সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে, বহু বছরের অবরুদ্ধ সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়ে। এখন দরকার সাহসী সিদ্ধান্ত, প্রজ্ঞাপূর্ণ নেতৃত্ব, আর একটানা এগিয়ে চলার অঙ্গীকার।..

 

বাংলাদেশের আটকে থাকা সম্ভাবনার মুক্তি চাপা ফাইল খুলছে নতুন ইতিহাস

 

বাংলাদেশের ইতিহাসের এক দীর্ঘ অধ্যায় ছিল, যেখানে উন্নয়ন পরিকল্পনা বারবার থমকে গিয়েছিল ভিনদেশি স্বার্থের মুখে। শেখ হাসিনা সরকারের সময়, ভারতীয় রাজনৈতিক ও কৌশলগত চাপের কারণে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ফাইলের গভীরে চাপা পড়েছিল। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাগুলো নিরবে অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছিল, যেখানে জাতীয় স্বার্থের বদলে অগ্রাধিকার পেয়েছিল প্রতিবেশী শক্তির সন্তুষ্টি।

 

২০১৭ সালে চীন বাংলাদেশের সামনে একটি যুগান্তকারী প্রস্তাব নিয়ে আসে: ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত মাত্র ৫৫ মিনিটে চলাচল সক্ষম বুলেট ট্রেন প্রকল্প। মন্ত্রণালয় পর্যায়ে সমস্ত যাচাই-বাছাই, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং চূড়ান্ত আলোচনার পর বাকি ছিল কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সই। কিন্তু সেই একটিমাত্র সই আর আসেনি। অজ্ঞাত এক ফোনকলের মাধ্যমে ফাইলটি টেবিল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল — কারণ, ভারতের অসন্তোষের ঝুঁকি ছিল প্রবল।

 

শুধু বুলেট ট্রেনই নয়। তিস্তা পানি ব্যবস্থাপনা চুক্তি, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, মংলা বন্দরের উন্নয়ন, চট্টগ্রাম মেরিন ড্রাইভের সম্প্রসারণ, রামু রাবার শিল্পের সম্প্রসারণ — সবকিছুই নীরবে আটকে ছিল। ভারতের চাহিদা ছিল বাংলাদেশ যেন চীনের সঙ্গে কৌশলগত বা বড় অবকাঠামোগত কোনো চুক্তিতে না যায়। ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পথ বন্ধ হয়ে পড়ে; দেশের উত্তরাঞ্চল খরা আর দারিদ্র্যের বেড়াজালে বন্দী থাকে; দক্ষিণাঞ্চলের গভীর সমুদ্রবন্দরের স্বপ্ন জমে থাকে ধুলোর স্তূপে।

 

২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব এবং রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে শেখ হাসিনার দীর্ঘমেয়াদি শাসনের অবসান ঘটে। জন্ম নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে আসেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। দেশে ফিরে তিনি শুরু করেন একটি মৌলিক কাজ — চাপা পড়া সব উন্নয়ন ফাইল উন্মোচন করা। সেই চাপা দেওয়া ইতিহাস আজ ভেঙে পড়ছে নতুন সম্ভাবনার জোয়ারে।

 

চীন আবার এগিয়ে এসেছে বুলেট ট্রেন প্রকল্পে। নতুন সরকার ঘোষণা করেছে, স্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম বুলেট ট্রেন নির্মাণ শুরু হবে। শুধু তাই নয়, সোনাদিয়ার গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প পুনরায় চীন এবং মালয়েশিয়ার যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হবে। তিস্তা অববাহিকায় বিশাল 'ডেল্টা প্রকল্প' শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে — যেখানে উত্তরাঞ্চলের কৃষির রূপান্তর ঘটবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সমুদ্রবন্দর ও মেরিন ড্রাইভের সম্প্রসারণ পরিকল্পনাও পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।

 

নতুন সরকারের অঙ্গীকার সুস্পষ্ট: আর কোনো বিদেশি চাপ বা পৃষ্ঠপোষকতার কাছে জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের সার্বভৌম উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব গড়ে তোলা হবে, যেখানে সমান মর্যাদা থাকবে — সেবা নয়, সম্মান থাকবে।  

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি পরিকল্পনাগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোয় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, আঞ্চলিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের ভূমিকা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।

 

আজ বাংলাদেশের সামনে নতুন ইতিহাস লেখার সুযোগ। সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে, বহু বছরের অবরুদ্ধ সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়ে। এখন দরকার সাহসী সিদ্ধান্ত, প্রজ্ঞাপূর্ণ নেতৃত্ব, আর একটানা এগিয়ে চলার অঙ্গীকার।

 

বাংলাদেশ আর কারো ছায়ার নিচে নয় — বাংলাদেশ আজ নিজের আলোয় পথ খুঁজছে।

No comments found