স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলাদেশে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা আসছে, যা দুর্গম অঞ্চলসহ পুরো দেশে সংযোগ নিশ্চিত করতে পারে। তবে এর খসড়া গাইডলাইনে সরকারের নজরদারি ও আড়িপাতার সুযোগ রাখা হয়েছে। ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এই সেবার প্রসঙ্গে ইতোমধ্যে নানা বিতর্ক শুরু হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা ও নীতিমালার আওতায় গ্রাহকদের তথ্য নজরদারির আওতায় আনার সুযোগ কি বাংলাদেশে স্বাধীন ইন্টারনেট ব্যবহারের পথে বাধা সৃষ্টি করবে? এই প্রতিবেদনে থাকছে বিস্তারিত বিশ্লেষণ।
বাংলাদেশের ইন্টারনেট সেবা খাতে বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে স্টারলিংকের মাধ্যমে। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার প্রবেশ নিশ্চিত করতে কাজ চলছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ইতোমধ্যে এর জন্য একটি খসড়া গাইডলাইন তৈরি করেছে, যা চূড়ান্ত হলে সেবাটি চালু করা সম্ভব হবে।
স্টারলিংক মূলত দূরবর্তী ও শিপিং অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য কার্যকর হতে পারে। কিন্তু নতুন খসড়া গাইডলাইনে নজরদারির সুযোগ রেখে সরকার জনগণের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের সুযোগ নিচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্টারলিংকের প্রযুক্তি ও সুবিধা
-
উচ্চগতির ইন্টারনেট: প্রতি সেকেন্ডে ১৫০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট, যা ভবিষ্যতে দ্বিগুণ হতে পারে।
-
দুর্গম এলাকায় সংযোগ: যেসব স্থানে ফাইবার অপটিক ক্যাবল পৌঁছায় না, সেখানে কার্যকর হবে।
-
মনোপলি ভাঙার সম্ভাবনা: দেশের বিদ্যমান ইন্টারনেট সেবা মনোপলি ব্যবসার অবসান ঘটাতে পারে।
-
উন্নত মানের পরিষেবা: গেমিং, ভিডিও কলিং, এবং স্ট্রিমিংয়ের ক্ষেত্রে উন্নত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করবে।
স্টারলিংকের গাইডলাইনে এমন কিছু শর্ত রাখা হয়েছে, যা ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করছে।
গাইডলাইনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত:
-
জাতীয় নিরাপত্তার নামে তথ্য নজরদারি: স্টারলিংককে এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে সরকার সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করতে পারে।
-
সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রবেশাধিকার: বাংলাদেশি গেটওয়েগুলোতে সরকারের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
-
আড়িপাতার সুযোগ: সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য সরবরাহ করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, "স্টারলিংক চালু হলে ইন্টারনেট শাটডাউন চিরতরে বন্ধ করা যাবে। অতীতে শেখ হাসিনার শাসনামলে বহুবার ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে, যা ফ্রিল্যান্সার ও সাধারণ জনগণের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়েছে। স্টারলিংক এলে ভবিষ্যতে কোনো সরকার এমন করতে পারবে না।"
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি
-
টেলিকম বিশেষজ্ঞরা বলছেন: "স্টারলিংক বাজারে এলে কম খরচে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত হবে। তবে নজরদারির বিষয়টি উদ্বেগজনক।"
-
আইএসপি ব্যবসায়ীরা বলছেন: "স্টারলিংকের খরচ বেশি হওয়ায় সাধারণ গ্রাহকদের জন্য এটি সহজলভ্য হবে না। তবে কর্পোরেট গ্রাহকরা সেবাটি গ্রহণ করতে পারে।"
-
নাগরিক অধিকার সংস্থাগুলোর মত: "আড়িপাতার সুযোগ থাকলে জনগণের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"
স্টারলিংক সেবা চালুর আগে সরকারি নীতিমালা কীভাবে চূড়ান্ত হয়, তা নজরে রাখা জরুরি। বাংলাদেশ সরকার যদি তথ্যের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় না রাখতে পারে, তাহলে এটি দেশের জনগণের জন্য নতুন সমস্যার কারণ হতে পারে।
স্টারলিংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে চলেছে। তবে এর খসড়া নীতিমালায় নজরদারির সুযোগ থাকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সরকার যদি তথ্যের স্বাধীনতা নিশ্চিত না করে, তাহলে এটি জনগণের গোপনীয়তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। স্টারলিংকের কার্যকারিতা ও গোপনীয়তা নিয়ে জনগণের উদ্বেগের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় সরকার, সেটাই এখন দেখার বিষয়।



















