কানাডার ক্যালগেরির বুকে বরফের চাদর বিছানো শীতের মাঝেও যেন উষ্ণতার সঞ্চার করল বাংলাদেশ-কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির (BCAOC) বার্ষিক সাধারণ সভা। স্থানীয় সময় শনিবার, জেনেসিস সেন্টারে আয়োজিত এ অনবদ্য অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাঙালিদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া।
প্রথমেই বাজানো হয় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। হৃদয়ে দেশপ্রেম জাগিয়ে দিয়ে শুরু হয় সভার আনুষ্ঠানিকতা। নতুন কমিটির সভাপতি ইকবাল রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসিফ হোসেন সকলকে স্বাগত জানান এক ঐক্যবদ্ধ ও আধুনিক কমিউনিটি গঠনের আহ্বান জানিয়ে।
সভাপতি ইকবাল রহমান বলেন, “প্রবাসে থেকেও আমরা যেন আমাদের শিকড় ভুলে না যাই। আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই যেখানে তারা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ নিয়ে গর্ব করতে পারে।”
তিনি আরো যোগ করেন, “আমরা ক্যালগারিতে একটি শক্তিশালী ও সম্মানিত বাংলাদেশি কমিউনিটি গড়তে চাই, যেখানে সবাই পারস্পরিক সহমর্মিতা আর সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে। সবাই মিলে কাজ করলে, ক্যালগেরিতে বাংলাদেশের পরিচিতি আরও বিস্তৃত হবে।”
সাধারণ সম্পাদক আসিফ হোসেন বলেন, “আজকের এই দায়িত্ব শুধু পদ নয়—এটা একটা অঙ্গীকার। আমাদের প্রজন্মকে পথ দেখানোর জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলক ও সামাজিক উদ্যোগে আমরা সবাইকে যুক্ত করে একটি অনন্য কমিউনিটি গড়ে তুলবো।”
তিনি আরও বলেন, আজ থেকে আমাদের কমিউনিটি কেন্দ্রিক যাত্রার নতুন অধ্যায় শুরু হল। সকলের সহযোগিতা চাই, যাতে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কিছু সুন্দর, গর্ব করার মতো উপহার দিতে পারি।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে বরফে আচ্ছাদিত এক কঠিন সময়ে, যখন আলবার্টার ক্যালগেরি শহরের আবহাওয়া ছিল বৈরী। কিন্তু সেই প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাও থামাতে পারেনি কমিউনিটির সদস্যদের উপস্থিতি আর উদ্দীপনাকে। অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রবাসী জ্ঞানী-গুণী, সংস্কৃতিমনা ও সমাজকর্মী ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি সভাকে পরিণত করে এক প্রাণবন্ত মিলনমেলায়।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহরগুলির মধ্যে ক্যালগেরির অবস্থান শীর্ষে। শুধু পরিচ্ছন্নতা নয়, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, নিরাপত্তা ও সম্প্রীতির শহর হিসেবেও ক্যালগেরি অনন্য। এমন শহরে বাংলাদেশি কমিউনিটির অবস্থান দিন দিন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সিনিয়র কমিউনিটি সদস্যরা। তারা বলেন, এই সংগঠন কেবল একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি একটি পরিবার। যেখানে সবাই মিলে কাজ করলে দেশপ্রেম, সংস্কৃতি, আর সমাজসেবা এক সুতোয় গাঁথা যায়।
অনুষ্ঠান শেষে ছিল হালকা আপ্যায়ন, মতবিনিময় ও পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সময়।
এই সভা শুধু নতুন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি ছিল এক নতুন পথচলার সূচনা। যেখানে উদ্দেশ্য একটাই—প্রবাসে থেকেও বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও পরিচিতিকে গর্বের সাথে বহন করা এবং একটি ঐক্যবদ্ধ, সক্রিয় ও সম্মানিত কমিউনিটি গড়ে তোলা।