close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের নতুন দিগন্ত: প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও দেশটির শীর্ষ ..

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর: দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন উচ্চতা!

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চীনের সঙ্গে সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় রচনা করতে চায়। এই লক্ষ্যেই আগামী ২৬ মার্চ চার দিনের সফরে চীন যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার এ সফরকে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আজ রবিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন অধ্যাপক ইউনূস। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ২৮ মার্চ বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন অধ্যাপক ইউনূস। এ বৈঠকে দুই দেশের কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে।

বাংলাদেশকে উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা

প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে দেশটিকে বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। বিশেষ করে, চীনের বড় বড় কারখানাগুলোকে বাংলাদেশে স্থানান্তরের বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

সফরের দ্বিতীয় দিনে, ২৭ মার্চ, অধ্যাপক ইউনূস হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠিতব্য বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (BFA) সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন। এই ফোরামকে বলা হয় ‘প্রাচ্যের দাভোস’, যেখানে এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় রাষ্ট্রপ্রধান, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা অংশ নেন। বাংলাদেশ এই ফোরামের মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের পরিকল্পনা করছে।

শীর্ষ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠক ও সম্ভাব্য বিনিয়োগ

সফরকালে অধ্যাপক ইউনূস চীনের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আলোচনার মূল বিষয় থাকবে কীভাবে চীনের কারখানাগুলো বাংলাদেশে স্থানান্তর করা যায় এবং কীভাবে দুই দেশের মধ্যে প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ সহযোগিতা আরও বাড়ানো যায়।

এছাড়াও, তিনি পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেবেন এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। পাশাপাশি, তিনি চীনের হাইটেক পার্ক পরিদর্শন করবেন, যা বাংলাদেশে আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন খাতে বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

চীনের সোলার কোম্পানির বিনিয়োগ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসঙ্গে আলোচনা

গত বছর জাতিসংঘ সম্মেলনের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস চীনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে দুটি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে অফিস স্থাপন করেছে এবং সোলার এনার্জিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শফিকুল আলম জানান, চীনের সোলার কোম্পানিগুলো ট্রেড প্রোটেকশনের কারণে অনেক দেশে বিনিয়োগে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশে তারা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হবে না।

চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারণ ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ

এই সফরে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনায় আসবে। পাশাপাশি, চীনের হাসপাতাল চেইনগুলোকে বাংলাদেশে যৌথ বিনিয়োগে আগ্রহী করার প্রচেষ্টা চালানো হবে।

চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বৈঠকে বলেন, "৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে চীনের কোম্পানিগুলো অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে।"

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, "আমরা আশা করছি, এই সফরের পর চীনের আরও বেশি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে এবং আমাদের অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।"

সফর শেষে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচনের প্রত্যাশা

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এ সফর শুধু কূটনৈতিক সৌজন্য সফর নয়, বরং এটি দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ম্যানুফেকচারিং হাব তৈরির লক্ষ্যে চীনের কারখানাগুলোর স্থানান্তর, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ, প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্য খাতে যৌথ বিনিয়োগের মতো বিষয়গুলো বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে, যা ভবিষ্যতে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Hiçbir yorum bulunamadı