কুড়িগ্রামের এক প্রত্যন্ত গ্রামে বুকভরা কষ্ট আর চোখভরা কান্না নিয়ে বেঁচে থাকার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে একটি ছোট্ট শিশু—হাসিবুল্লাহ। বয়স মাত্র দুই বছর। এই বয়সেই তার শরীর বোঝাতে শুরু করেছে মৃত্যুর আভাস। হার্টে ফুটো, চিকন রক্তনালী, নিঃশ্বাস নিতে গেলে যেন যুদ্ধ—এভাবেই চলছে তার দিনরাত্রি।
গত বছরের অক্টোবর মাসে হঠাৎ করে প্রচণ্ড চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে হাসিবুল্লাহ। বুক চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে সে। গ্রামের মানুষ হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে থাকে শিশুটির যন্ত্রণাময় অজ্ঞান শরীরের দিকে—কেউ কিছু করতে পারে না, শুধু চোখের জল ফেলে।
তার মা হাসনা বেগম ছেলেকে বাঁচাতে নিজের সর্বস্ব বিক্রি করে ১৪ অক্টোবর ২০২৪ সালে ঢাকার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, শিশুটির হার্টে ফুটো ও রক্তনালীতে জটিলতা রয়েছে। অপারেশনের জন্য প্রয়োজন ৪ লক্ষ টাকা, এবং সময়সীমা মাত্র ৪ মাস। অর্থাভাবে এত বড় পরিমাণ টাকা জোগাড় করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
এরপর তিনি সন্তানকে নিয়ে যান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। কিছুটা আশার আলো সেখানেই পান—সেখানে চিকিৎসকরা জানান, সীমিত ব্যয়ে ১ লক্ষ টাকায় অপারেশন সম্ভব, কিন্তু সময়সীমা এখানেও ৪ মাস।
তারপর শুরু হয় আরেক যুদ্ধ—জীবনের জন্য অর্থের সংগ্রাম। ১৫ অক্টোবর ২০২৪ সালে বাড়ি ফিরে গিয়ে হাসনা বেগম আপ্রাণ চেষ্টা করেন। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, এনজিও, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি—যার কাছে গেছেন, সবাই দুঃখপ্রকাশ করেছেন, কিন্তু কেউ ১ লক্ষ টাকা দিতে পারেননি।
আজ ১০ মে ২০২৫। প্রায় সাত মাস কেটে গেছে। প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে পারেননি অসহায় মা। আর সেই কারণেই ধীরে ধীরে শিশুটির শারীরিক অবস্থা ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ঠোঁট আর নখ মাঝে মাঝে নীল হয়ে যায়, মাঝে মাঝে কালো। বুকের ধড়ফড় এমন ভয়ানক হয়ে ওঠে যে কোলে নেওয়ার সময় মনে হয় শিশুটি যেন দৌড়ে এসেছে অনেক দূর থেকে।
শিশুটি কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কালিগঞ্জ ইউনিয়নের পুসকুনির পাড় এলাকার বাসিন্দা। তার মা হাসনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
"আমি আমার বাচ্চাটাকে কোলে নিই আর ভাবি এটা কি আমার ছেলে? ওর বুকের ধড়ফড় এত ভয়ানক লাগে যে মনে হয় হাতের মধ্যে থেকে হারিয়ে যাবে! আপনারা দয়া করে আমার ছেলেটাকে বাঁচাতে সাহায্য করুন। বিনা চিকিৎসায় মরছে সে।"
আগামী ১৩ মে ২০২৫ (মঙ্গলবার) জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে শিশুটিকে ভর্তি করানোর পরিকল্পনা আছে। তবে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হবে না যদি না সময়মতো প্রয়োজনীয় ১ লক্ষ টাকা জোগাড় করা যায়।
সাহায্যের আবেদন:
এই প্রতিবেদনটি সমাজের সকল হৃদয়বান ব্যক্তি ও সংস্থার প্রতি একটি অনুরোধ—দয়া করে একবার ভাবুন, একটি অবুঝ শিশুর জীবন আপনি হয়তো একটি ছোট সহায়তায় রক্ষা করতে পারেন।
যোগাযোগ ও সাহায্য পাঠানোর তথ্য:
মা হাসনা বেগমের মোবাইল (বিকাশ/নগদ): ০১৩৪০৯২০৭৮১
ভিডিও কলে শিশুটিকে দেখতে (হোয়াটসঅ্যাপ): ০১৭১৩২০০০৯১
প্রতিবেদক: সময়ের কন্ঠস্বর