close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

বাজুস নেতা গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সারাদেশে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী থেকে খুলনা—সব জেলায় স্বর্ণ ব্যবসা স্তব্ধ! বাজুসের সহ-সভাপতি রিপনুল হাসানের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা জুয়েলারি দোকান মালিকদের। উত্তাল স্বর্ণ ব্য..

বাজুস নেতা গ্রেপ্তার ঘিরে উত্তাল স্বর্ণ ব্যবসা: অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ দেশের সব জুয়েলারি দোকান

বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায় আজ নেমে এসেছে চরম অস্থিরতা। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সহ-সভাপতি মো. রিপনুল হাসানের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকাল থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা।

এই হঠাৎ সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার ক্রেতা এবং ব্যবসায়ী। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুরসহ প্রতিটি বড় শহরে জুয়েলারি দোকানগুলোতে ঝাঁপ নামানো অবস্থায় দেখা গেছে। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের এই কঠোর সিদ্ধান্তে পুরো খাতে দেখা দিয়েছে এক ধরনের অচলাবস্থা।

গ্রেপ্তারের ঘটনা ও তার পেছনের অভিযোগ

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মো. রিপনুল হাসান যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মোট ৮টি মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা রিপনুল হাসানকে আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তার করেছি এবং তার রিমান্ড চাওয়া হবে।”

তবে বাজুসের পক্ষ থেকে এই গ্রেপ্তারকে ‘মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক’ বলে দাবি করা হয়েছে। সংগঠনের নেতারা বলছেন, এটা একটি পরিকল্পিত হয়রানির অংশ। বিশেষ করে, মোহাম্মদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে দায় চাপানো হয়েছে রিপনুল হাসানের ওপর, যা পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

তাঁতীবাজার থেকে গ্রেপ্তার, ঢাকায় ছড়ালো উত্তেজনা

বুধবার (২৮ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী স্বর্ণ ব্যবসাকেন্দ্র তাঁতীবাজারে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রিপনুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে। এই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় বাজুস এবং রাতেই সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য জুয়েলারি দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণা আসে।

বাজুস নেতাদের প্রতিবাদ ও হুঁশিয়ারি

বাজুসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, “সহ-সভাপতি রিপনুল হাসানকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।”

তারা আরও বলেন, “স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কোনো রকম হয়রানি বরদাশত করা হবে না। যদি দ্রুত গ্রেপ্তার প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে বাধ্য হবো।”

ব্যবসায়ীদের ভাষ্যে ক্ষোভ ও শঙ্কা

রাজধানীর পল্টন এলাকার এক জুয়েলারি দোকান মালিক জানান, “রিপন ভাই একজন পরিচিত মুখ। তাকে যেভাবে তুলে নেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা হতবাক। এটা আমাদের ব্যবসা এবং নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত।”

চট্টগ্রামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, “এই গ্রেপ্তার যেন একটা সতর্ক বার্তা—স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমাজ ভয়ে আছে। আমরা মনে করি, এটি নির্যাতনের নতুন কৌশল।”

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ কী?

বর্তমানে সারাদেশে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিনের লেনদেন স্থবির হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা না এলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অচলাবস্থা দ্রুত নিরসন না হলে স্বর্ণ খাত ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে, এবং সাধারণ জনগণও মূল্য পরিশোধ করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।



এই গ্রেপ্তারের ঘটনা শুধু একজন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে নয়, এটি বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসার স্বাভাবিক চলাচলের ওপর বড় ধাক্কা। ব্যবসায়ীরা বলছেন—এটি যদি নিছক একটি রাজনৈতিক কৌশল হয়, তবে তার পরিণতি হতে পারে আরও ভয়াবহ। এখন দেখার বিষয়, সরকার ও প্রশাসন কীভাবে এই সংকটের সমাধান করতে এগিয়ে আসে।

کوئی تبصرہ نہیں ملا