close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

বাড্ডায় প্রকাশ্যে বিএনপি নেতাকে খুনের ঘটনায় মামলা, এখন পর্যন্ত যা জানা গেল..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
রাজধানীর বাড্ডার জনবহুল এলাকায় চায়ের দোকানে বসে ছিলেন বিএনপি নেতা কামরুল আহসান সাধন। হঠাৎ করেই দুই মাস্কধারী এসে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া ঘাতকরা এখন পুলিশের নজরে। ঘটনাটি ঘিরে ..

রাজধানীর বাড্ডা। সময় তখন রাত ৯টা। গুদারাঘাট ৪ নম্বর গলির পাশে একটি চায়ের দোকানে কয়েকজনের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান সাধন। হঠাৎ করেই দুই ব্যক্তি হেঁটে এসে তার দিকে পিস্তল তাক করে একের পর এক গুলি ছুড়তে থাকে। মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়েন সাধন। চারপাশে লোকজন থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।

এই নির্মম হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে ২৫ মে রোববার রাতে। ঘটনার একটি ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

ঘটনাস্থলের বিবরণ

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, নিহত সাধন ছিলেন স্থানীয়ভাবে পরিচিত একজন রাজনীতিবিদ এবং ডিস ব্যবসায়ী। তিনি নিয়মিত এই এলাকায় আসতেন। গুলি চালানোর সময় দুই হামলাকারী মাস্ক পরে ছিলেন। গুলি করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা। পালানোর সময় আশপাশে থাকা লোকজনকে ভীত করতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছোড়ে তারা।

সাধনের এক আত্মীয় জানান, ঘটনাটি ঘটে সাবেক কমিশনার কাইয়ুমের কার্যালয়ের বিপরীত পাশে। গুলির শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে দেখা যায় সাধন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে উদ্ধার করে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাধনের শরীরে বুকে, পিঠে ও ঘাড়ে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।


হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশের অবস্থান

ঘটনার পরদিন, অর্থাৎ ২৬ মে সোমবার, নিহতের স্ত্রী মোছা. দিলরুবা বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি, অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে।

বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে, একইসঙ্গে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে দুই হামলাকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমি এখনো বিষয়টি জানি না।” ফলে এই বক্তব্যে পুলিশের ভেতরে সমন্বয়ের ঘাটতির প্রশ্নও উঠেছে।


পটভূমি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

নিহত কামরুল আহসান সাধন ছিলেন গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন বহুদিন ধরে। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেকেই দাবি করছেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থাকতে পারে। তবে এ বিষয়ে পুলিশ এখনো কিছু নিশ্চিত করেনি।


ভবিষ্যতের পদক্ষেপ ও তদন্তের গতি

এখন প্রশ্ন উঠছে—এই হত্যাকাণ্ডের আসল কারণ কী? নিহতের সঙ্গে কার বা কাদের শত্রুতা ছিল? হত্যাকারীরা কারা এবং কার নির্দেশে তারা কাজ করছিল?

পুলিশ বলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে বিস্তারিত জানানো হবে। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এবং সিআইডি একযোগে তদন্তে নেমেছে।


সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

সাধনের প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ড সাধারণ মানুষের মনে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বাণিজ্যিক এলাকায় এত সহজে সশস্ত্র হামলা এবং হামলাকারীদের পালিয়ে যাওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই লিখেছেন, "যদি একজন রাজনৈতিক নেতাকে চায়ের দোকানে বসা অবস্থায় গুলি করে মারা যায়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?"


 

বাড্ডায় প্রকাশ্যে গুলি করে বিএনপি নেতা কামরুল আহসান সাধনকে হত্যার ঘটনা রাজধানীর সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম আলোচিত একটি হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনার তদন্ত, দায়ীদের শাস্তি, এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট—সবকিছুই এখন জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
এখন সময়ের দাবি—এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক এবং শহরের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

Nenhum comentário encontrado