আতিথেয়তার আড়ালে অপরাধ? বিসিবির ‘অফিশিয়াল’ ছিলেন পলাতক আসামি এসএম রানা"—
> এক নজরে:
> - ভূমিদস্যু ও গুম-খুন মামলার পলাতক আসামিকে বিসিবির অর্থে আতিথেয়তা
> - রেডিসন হোটেল ও বিমানের টিকিট দেওয়া হয় 'অফিসিয়াল' পরিচয়ে
> - বিসিবি সভাপতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ
> - এসএম রানাকে গ্রেপ্তার করা হয় দুবাই পালানোর সময়
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) ঘটা একটি সাম্প্রতিক ঘটনা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এক পলাতক আসামিকে বিসিবির পক্ষ থেকে ‘অফিসিয়াল’ পরিচয়ে রেডিসন হোটেলে রাখা এবং বিমানে ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর বিস্ময়ের পাশাপাশি উঠেছে নৈতিকতা ও জবাবদিহির প্রশ্ন।
নাম এসএম রানা। নারায়ণগঞ্জের পরিচিত ভূমিদস্যু হিসেবে তার পরিচিতি নতুন নয়। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে গড়ে তুলেছেন এক বিতর্কিত প্রভাব। তার বিরুদ্ধে গুম, খুন, জমি দখল, চাঁদাবাজি—এসব অভিযোগ বহুদিনের। মামলার তথ্য বলছে, তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর ও ফতুল্লা মডেল থানায় একাধিক মামলা রয়েছে (মামলা নং ১২/২৭-০৮-২৪ এবং ১৮/২২-০৮-২৪)। অথচ এমন এক ব্যক্তি, রাষ্ট্রের চোখে যিনি পলাতক, তাকে বিসিবি ‘অফিসিয়াল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থে সম্মানিত করেছে—এটাই এখন জনমনে প্রশ্ন।
সূত্র বলছে, বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠ হিসেবেই রানা পেয়েছেন এমন সুবিধা। ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত তাকে রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে রাখা হয়, বিসিবির খরচে। সেইসঙ্গে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে তার বিমানের টিকিটও দেওয়া হয় বোর্ড থেকেই।
এমনকি বিভিন্ন ম্যাচে সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে এসএম রানার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু ছবি ঘুরছে, যেখানে দুজনকে একসাথে দেখা গেছে মাঠে ও গ্যালারিতে।
“একজন পলাতক আসামি কীভাবে রাষ্ট্রীয় ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানের অর্থে আতিথেয়তা পায়? বিসিবির মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় এমন নজিরবিহীন উদাহরণ কাদের অনুমতিতে ঘটছে?” — একজন সাবেক বিসিবি পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে
এই নাটকীয় সংযোগের পরিণতি ঘটে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ।
দুবাই পালানোর চেষ্টাকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এসএম রানাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তাকে হস্তান্তর করা হয় নারায়ণগঞ্জ পিবিআই কার্যালয়ে। তবে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত বিসিবি তার আতিথেয়তার ভার কাঁধে তুলে নিয়েছিল—আর এটাই পুরো ঘটনায় সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক।
এ প্রসঙ্গে বিসিবি বা সভাপতি ফারুক আহমেদের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রশ্ন রয়ে যায়—বিসিবির ভেতরে এমন কী সম্পর্ক বা চাপ কাজ করেছে, যার ফলে একজন পলাতক আসামি 'অফিসিয়াল' হয়ে উঠতে পারেন?
এই ঘটনা কেবল বিসিবির সুশাসন প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং ক্রিকেটের মতো একটি স্পর্শকাতর ও জনপ্রিয় অঙ্গনে নৈতিকতার সংকট স্পষ্ট করে তোলে। জনমানসে একটাই প্রশ্ন—বিসিবি কি এখন শুধুই ক্রিকেটীয় প্রতিষ্ঠান, নাকি রাজনৈতিক বন্ধুত্বের বেষ্টনী?
বাংলাদেশের ক্রিকেট কি তাহলে নিরাপদ হাতেই আছে?
এই প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি।
বখতিয়ার শামীম | অনুসন্ধান বিভাগ | প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২৫