close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

আরেকটি ফুলের অকালমৃত্যু: আমরা কি কেবলই দর্শক?

ফরিদপুর ডেস্ক avatar   
ফরিদপুর ডেস্ক
মুহাম্মদ ইমরান মোল্যা, নিউজ কন্ট্রিবিউটর

আরেকটি নিষ্পাপ প্রাণ অকালে ঝরে গেল নৃশংসতার শিকার হয়ে। নাটোরের বড়াইগ্রামের গাড়ফা গ্রামে ছয় বছর বয়সী আকলিমা আক্তার জুঁইয়ের ক্ষতবিক্ষত ম*রাদেহ ভুট্টা ক্ষেত থেকে উদ্ধার হওয়ার খবর আমাদের স্তম্ভিত করেছে, আমাদের বিবেককে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। 

সতেরো ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর এই ছোট্ট নিষ্পাপ পরিণতি যেন এক দুঃস্বপ্নের চেয়েও ভয়াবহ। স্থানীয়দের ধারণা, ধ*র্ষ*ণের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং পাষণ্ডরা এখানেই থামেনি, এসিড দিয়ে তার নিষ্পাপ মুখমণ্ডল বি*কৃত করে নিজেদের ঘৃণ্য অপরাধের চিহ্ন মুছে ফেলতে চেয়েছে।

জুঁইয়ের বাবা জাইরুল এবং মা মোমেনার বুকফাটা আর্তনাদ আজ শুধু তাদের ব্যক্তিগত শোক নয়, এ যেন গোটা জাতির বেদনার প্রতিচ্ছবি। আমরা বাকরুদ্ধ, ক্ষুব্ধ এবং একইসাথে অসহায়। বারবার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমাদের মনে প্রশ্ন জাগায়—কোথায় আমাদের নিরাপত্তা? কোথায় আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ?

আছিয়ার নির্মম হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি এখনও আমাদের মন থেকে মুছে যায়নি। সেই ঘটনার বিচার আজও সম্পন্ন হয়নি, অপরাধীরা হয়তো আজও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর তারই পুনরাবৃত্তি যেন দেখলাম জুঁইয়ের ক্ষেত্রে। একটি ফুলের অকালমৃত্যু, একটি সম্ভাবনার অপমৃত্যু—এই নৃশংসতা আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বাঁধা অন্ধকারকেই স্পষ্ট করে তোলে।

আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি, জুঁইয়ের মতো একের পর এক নৃশংস ঘটনা ঘটার মূল কারণ হলো আমরা অপরাধীদের দ্রুত ও কার্যকর বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছি। দীর্ঘসূত্রিতা এবং দুর্বল তদন্ত প্রক্রিয়া অপরাধীদের মনে ভয় সৃষ্টি করতে পারেনি। ফলে, তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে এবং একের পর এক নিষ্পাপ জীবন কেড়ে নিচ্ছে।

তাই, আমাদের প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন, আর কালক্ষেপণ নয়। এই ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো পাষণ্ড এমন ঘৃণ্য অপরাধ করার সাহস না পায়। শুধু তদন্ত আর শাস্তি নয়, আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের জাগরণও আজ জরুরি। পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে শিশুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

আমরা সরকারের কাছে জোর আবেদন জানাচ্ছি, জুঁইয়ের হত্যাণ্ডের দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করা হোক। এই বিচারের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন স্বচ্ছ ও কার্যকর হয়, এবং দোষীরা যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়। এই শাস্তি শুধু জুঁইয়ের পরিবারের জন্য সান্ত্বনা নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেবে যে এমন জঘন্য অপরাধের কোনো ক্ষমা নেই।

আমরা মনে করি, দ্রুত বিচার কার্যকর করার মাধ্যমেই সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। যখন অপরাধীরা বুঝবে যে তাদের অপকর্মের দ্রুত ও কঠোর শাস্তি হবে, তখন তারা এমন ঘৃণ্য কাজ করতে দ্বিধা বোধ করবে। এর মাধ্যমেই আমরা আমাদের শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ সমাজ তৈরি করতে পারব, যেখানে কোনো নিষ্পাপ প্রাণ অকালে ঝরে যাবে না।

জুঁইয়ের রক্ত যেন বৃথা না যায়। আছিয়ার বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা যেন জুঁইয়ের ক্ষেত্রে না ঘটে। আমরা আর কোনো নিষ্পাপ শিশুর এমন মর্মান্তিক পরিণতি দেখতে চাই না। এই নৃশংসতার অবসান হোক—এখনই, এই মুহূর্তে। আমাদের সম্মিলিত কণ্ঠস্বরই হয়তো পারবে এই অন্ধকার ভেদ করে আলোর পথ দেখাতে। আমরা কি কেবলই দর্শক হয়ে থাকব, নাকি রুখে দাঁড়াব এই ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে? উত্তর দেওয়ার সময় এসেছে। জুঁইয়ের আত্মা শান্তি পাক। আর যেন কোনো শিশুকে এমন ভয়াবহ পরিণতির শিকার হতে না হয়, সেই লক্ষ্যে সরকার এবং সমাজের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। দ্রুত বিচারই এর একমাত্র পথ। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই দাবিতে সোচ্চার হই এবং একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করি।

Nenhum comentário encontrado