নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ধানাইদহ বাজারে ঘটে গেছে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। একটি সময় যা ছিল আওয়ামী লীগের পরিচিত কার্যালয়, সেই ভবনের সামনেই এখন স্পষ্টভাবে ঝুলছে “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল – বিএনপি”র সাইনবোর্ড। এ ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে তীব্র উত্তেজনা ও চরম প্রতিক্রিয়া।
ঘটনাটি ঘটে ধানাইদহ বাজার এলাকার শহিদ কল্লোল স্মৃতি সংঘ নামক ভবনে, যা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সাবেক আওয়ামী লীগ সাংসদ আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে এটি ব্যবহার করে আসছিলেন নগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নীলুফার ইয়াসমিন ডালু। তবে ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট তারিখে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ভবনটি দগ্ধ হয়, আগুনে পুড়ে যায় পুরো কার্যালয়।
এরপর দীর্ঘ সময় পর সম্প্রতি স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা সেখানে ‘৪নং নগর ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়’ নামে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন। সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় রাজনৈতিক আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক, এবং সামাজিক মাধ্যমে ঝড়। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—এটা কি স্রেফ জমির মালিকানা অনুযায়ী স্বাভাবিক পরিবর্তন, নাকি রাজনৈতিক দখলদারিত্বের সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ?
বিএনপির বক্তব্য অনুযায়ী, জায়গাটি তাদেরই নেতা আসাব সরকারের মালিকানাধীন। বিএনপি নেতা সাজদার রহমান জানান, "আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পত্তিতে অফিস করছি। আওয়ামী লীগ শুধু সময়িকভাবে এটা ব্যবহার করছিল। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর আমরা জায়গাটি পুনরায় নিজেদের দখলে নিয়েছি।"
তবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা ভিন্নমত পোষণ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, “এভাবে দখল পরিবর্তন রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত। আমরা কিছু বললে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই শঙ্কায় থাকি।”
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো দ্রুত পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সারোয়ার হোসেন জানান, “ঘটনাটি সম্পর্কে আমরা অবগত, তবে কেউ এখনো লিখিত অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে প্রশ্ন উঠেছে—যে জায়গাটি নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, সেটি কি আদৌ রাজনৈতিক অফিস হিসেবে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত ছিল? পুড়ে যাওয়া কার্যালয়ের কোনো পুনর্গঠনের উদ্যোগ না নিয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে নতুন অফিস স্থাপন কতটা সঠিক—তা নিয়েও জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
অপরদিকে, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি বা প্রতিবাদ পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা যদি প্রতিহিংসামূলক রূপ নেয়, তাহলে তা বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
একইসঙ্গে সাধারণ জনগণ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে। অনেকের মতে, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হলো—নাটোরের বড়াইগ্রামে এই ‘দখল পাল্টানোর রাজনীতি’ কেবল জমির ওপর সীমাবদ্ধ থাকবে, না কি তা ছড়িয়ে পড়বে আরও বড় রাজনৈতিক উত্তেজনায়?