close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

আন্তর্জাতিক নার্স দিবস আজ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বিশ্বজুড়ে আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। রোগীর পাশে নীরবে নিরলস কাজ করা এই যোদ্ধাদের সম্মানে ১২ মে দিনটি উৎসর্গ করা হয়েছে, যাঁদের অবদান ছাড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থা অচল।..

আন্তর্জাতিক নার্স দিবস: সেবার নিঃশব্দ সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা

আজ ১২ মে, আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্যতম স্তম্ভ, যাঁদের সেবা, সহানুভূতি আর নিরলস দায়িত্ববোধ ছাড়া কোনো রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠা কল্পনাও করা যায় না — তাঁদেরই সম্মান জানাতে প্রতি বছর এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে বিশ্বব্যাপী।

নার্সদের কর্মদক্ষতা কেবল হাসপাতালের ভেতরে সীমাবদ্ধ নয়; বরং সমাজের স্বাস্থ্যচর্চা ও সচেতনতার প্রতিটি স্তরে তাঁদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। একজন রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার প্রতিটি পরিবর্তনের দিকে নজর রাখা, সঠিক সময়ে ওষুধ প্রয়োগ, ইনজেকশন দেওয়া, এমনকি জরুরি অবস্থায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো দায়িত্বও তাঁরা পালন করেন। অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকদের সহায়তা, রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং আত্মীয়স্বজনকে পরামর্শ দেওয়ার মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সামলান এই সেবিকারা।

দিবসটির সূচনা ও পটভূমি

১৯৫৩ সালে আন্তর্জাতিক নার্স কাউন্সিল (ICN) প্রথম এই দিবসটি পালনের প্রস্তাব দেয়। যদিও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আসে ১৯৭৪ সালে। ওই বছর ১২ মে তারিখটিকে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই তারিখটি বেছে নেওয়ার পেছনে রয়েছে গভীর তাৎপর্য—কারণ এদিন জন্মগ্রহণ করেছিলেন আধুনিক নার্সিং পেশার জননী ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।

ক্রিমিয়ান যুদ্ধের সময় তাঁর চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার পদ্ধতিগত পরিবর্তন সারা বিশ্বে বিপ্লব ঘটায়। তাঁর জন্মদিনটিকে স্মরণ করে আজকের এই দিনটি নার্সদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।

২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য ও প্রেক্ষাপট

এই বছরের আন্তর্জাতিক নার্স দিবসের থিম: ‘আমাদের নার্সরা আমাদের ভবিষ্যৎ। নার্সদের যত্ন আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে।’
এই প্রতিপাদ্যটি কেবল একটি শ্লোগান নয়, বরং বর্তমান বাস্তবতায় গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক। বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতে নানা সংকট দেখা দিলেও, নার্সদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হলে একটি দেশের অর্থনীতিতেও তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে — এই মেসেজই তুলে ধরা হয়েছে থিমে।

বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে নার্স সংকট

বাংলাদেশেও নার্সদের ভূমিকা অমূল্য। অথচ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নার্সের চাহিদা অনুযায়ী প্রাপ্তি নেই। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নার্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর্মীর বিপুল শূন্য পদ রয়েছে। এ সংকটের দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নার্সদের পর্যাপ্ত নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত না করা গেলে স্বাস্থ্যসেবার মান সংকটে পড়বে এবং জনগণের আস্থা হারাবে। তাই শুধু দিবস পালন নয়, নার্সদের বাস্তব সম্মান জানাতে হলে স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।

নার্সদের প্রতি সত্যিকারের সম্মান কোথায়?

আন্তর্জাতিক নার্স দিবসে কেবল ফুল দিয়ে, পোস্টার বানিয়ে, বা বক্তৃতা দিয়ে দায়িত্ব শেষ নয়। প্রয়োজন তাঁদের প্রকৃত মর্যাদা দেওয়া—যেমন সঠিক বেতন কাঠামো, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, কাজের চাপের ভারসাম্য, এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন।

নার্সরা যদি সুরক্ষিত থাকেন, তাঁদের পরিবার যদি নিশ্চিন্তে থাকে, তাহলেই তাঁরা মনপ্রাণ দিয়ে রোগীদের সেবা দিতে পারবেন। এটাই দিবসটির মূল বার্তা।

No comments found