close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

আন্দোলনে নাটকীয় মোড়: শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের আগে রেল অবরোধ স্থগিত করল পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সাত দফা দাবিতে উত্তাল সারা দেশের পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে রেল অবরোধ কর্মসূচি শুরু হলেও শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের আগেই সেটি শিথিল করা হয়েছে। বৈঠক ফলপ্রসূ না হলে আবার নামবে রাজপথ..

রেল অবরোধে নাটকীয় বিরতি: শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের আগেই শিথিল আন্দোলন

সারা দেশের পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি-দাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হওয়া আন্দোলনে নতুন মোড় নিয়েছে। রেল অবরোধের ঘোষণা দিয়েও আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ১১টা পর্যন্ত সে কর্মসূচি শিথিল করেছে তারা। তবে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয়—আজকের শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের ফলাফলের উপরই নির্ভর করছে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ গতি।

পলিটেকনিক ছাত্রদের পক্ষ থেকে আন্দোলনের সমন্বয়ক ও কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, “আজ সকাল ১১টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক রয়েছে। বৈঠকে যদি আমাদের ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি মেলে, তবে আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসবো। অন্যথায়, রেল অবরোধসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।”


দেশজুড়ে ছিল সড়ক অবরোধ, এবার লক্ষ্য রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা

আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এতে পুরো শহরে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। বনানী, মহাখালী, মগবাজার, ফার্মগেট, আগারগাঁও, গুলশান, মিরপুরসহ অনেক এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে।

ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রাস্তায় নেমে আসে হাজারো পলিটেকনিক শিক্ষার্থী। রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধের ফলে একাধিক ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, “আমরা আগের দিনের মতো সড়ক অবরোধ স্থগিত করেছি, কিন্তু আন্দোলন থেমে নেই। আমরা এবার দেশের রেল যোগাযোগ অবরোধ করার দিকে যাচ্ছি।”


বৈঠক ব্যর্থ হলে ফের অবরোধ, সবার প্রস্তুতি নিতে আহ্বান

গত কয়েকদিনে শিক্ষার্থীরা একাধিকবার কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমাদ খান, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে। কিন্তু কোনো কার্যকর ফলাফল আসেনি। জুবায়ের অভিযোগ করেন, “তারা আমাদের দাবিগুলো লিখিতভাবে মেনে নেয়নি। এজন্যই আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি।”

এ সময় তিনি সারা দেশের পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের একত্র হয়ে আন্দোলন আরও জোরদার করার আহ্বান জানান।


শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি কী?

১. জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের পদোন্নতির হাইকোর্টের রায় বাতিল।
২. ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবির পরিবর্তন ও মামলায় জড়িতদের চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার।
৩. ২০২১ সালের নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণ বাতিল ও সংশ্লিষ্ট বিধি সংস্কার।
৪. ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যে কোনো বয়সে ভর্তি বন্ধ করে চার বছর মেয়াদি মানসম্মত কারিকুলাম তৈরি।
৫. ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে কোর্স চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ।
৬. উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (দশম গ্রেড) পদে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও সার্ভেয়িং ডিগ্রিধারীদের সংরক্ষণ এবং নিচু পদে নিয়োগ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।


শেষ কথা: বৈঠকের দিকে তাকিয়ে দেশ

এই মুহূর্তে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যেন এক দোলাচলে দাঁড়িয়ে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, “আমরা সংঘাতে যেতে চাই না, কিন্তু দাবি আদায়ে আমরা ছাড় দেবো না।” শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আজকের বৈঠকই ঠিক করে দেবে—দেশের রেল ও সড়ক যোগাযোগ আবার স্তব্ধ হবে কি না।

দেশ এখন তাকিয়ে আছে সেই আলোচনার দিকে। শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রশাসনের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে—শান্তি ফিরবে, নাকি আন্দোলনের ঢেউ আরও বড় হবে।

No se encontraron comentarios