close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

আমরা ঘৃণার বদলে ভালোবাসা দেব- মুনতাসির মেহেদী

Juwel Hossain avatar   
Juwel Hossain
****

সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য ঘোষিত জেলা কমিটিকে ‘অবৈধ, অস্বচ্ছ ও একতরফা’ আখ্যা দিয়ে প্রায় ৫০ জন নেতার গণপদত্যাগের ঘটনায় সংগঠনটির ভেতরে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। রোববার দুপুরে সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা আসার পর ঘটনাটি শুধু জেলা নয়, কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

এরই মধ্যে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে সদ্য ঘোষিত কমিটির আহ্বায়কের এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্ট। নিজের ব্লু ব্যাজ সংবলিত ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, “আমরা ঘৃণার বদলে ভালোবাসা দেব এবং গঠনমূলক সমালোচনাকে শ্রদ্ধা করবো।

কমেন্ট সেকশনে তিনি আরও লিখেন "এবং যদি মুখ খোলা শুরু করি, তাদের মেরুদণ্ড সোজা করে হাঁটা কষ্টকর হয়ে যাবে তাদের জন্য।”

এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সংগঠনের ভেতরে ও বাইরে নতুন করে সমালোচনা শুরু হয়েছে। কেউ একে অপ্রত্যাশিত ও উত্তেজনাপূর্ণ মন্তব্য বলে মনে করছেন, আবার কেউ বলছেন এটি পদত্যাগকারী নেতাদের অভিযোগেরই প্রতিফলন।

পদত্যাগকারী নেতাদের অভিযোগ—কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্বের আহ্বায়ক কমিটিকে বিলুপ্ত না করেই হঠাৎ করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে। প্রক্রিয়াটি ছিল গোপন, অস্বচ্ছ এবং পরামর্শবহির্ভূত—যা একটি ‘বৈষম্যবিরোধী’ সংগঠনের আত্মপরিচয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তারা সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, নতুন কমিটিতে এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, অনৈতিক আচরণ, মাদকসংশ্লিষ্টতা এবং প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করার অভিযোগ।

এমন প্রেক্ষাপটে সদ্য ঘোষিত আহ্বায়কের ফেসবুক পোস্টকে অনেকেই দেখছেন একটি অস্থির, প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে। বিশেষ করে “মেরুদণ্ড সোজা করে হাঁটা কষ্টকর হয়ে যাবে” বাক্যটিকে অনেকে হুমকিসূচক মনে করছেন।

পোস্টটি প্রকাশের পরই অনলাইনে শুরু হয় নানা মতামতের ঝড়। কেউ লিখেছেন, একটি দায়িত্বশীল নেতৃত্বের কাছ থেকে এমন মন্তব্য কাম্য নয়। আবার কেউ মনে করেন, পদত্যাগকারী নেতারা সংগঠনের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার লড়াইয়ের অংশ হিসেবে পরিস্থিতি জটিল করেছেন, তাই কঠোর প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশিতই ছিল।

স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ছাত্রভিত্তিক একটি আন্দোলন যদি স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হয়, তবে তা সংগঠনের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক-সামাজিক ভূমিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

পদত্যাগকারী নেতারা তাদের বক্তব্যে বলেছেন—গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া গঠিত কোনো কমিটি তারা মেনে নেবেন না। অন্যদিকে নতুন কমিটির নেতৃত্ব তাদের অবস্থান আরও শক্তভাবে তুলে ধরছেন। ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিরাজগঞ্জ জেলা শাখা এখন কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি বিষয়টি কীভাবে মূল্যায়ন করবে, সেটিই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যদি দ্রুত সংলাপে না বসে, তবে এই সংকট আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে—যা একটি সম্ভাবনাময় ছাত্র সংগঠনের কাঙ্ক্ষিত অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করবে।

বৈষম্যবিরোধী সংগ্রামে ঐক্য ও স্বচ্ছতা সবচেয়ে বড় শক্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখাচ্ছে, সেই শক্তিই এখন সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুখে। নেতৃত্বের বক্তব্য থেকে শুরু করে পদত্যাগকারীদের অভিযোগ—সব মিলিয়ে সিরাজগঞ্জের ঘটনাটি এখন জাতীয় পরিমণ্ডলেও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে।

সংগঠনটি পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেয়—সেটিই নির্ধারণ করবে তাদের ভবিষ্যৎ অবস্থান ও গ্রহণযোগ্যতার দিকনির্দেশ।

لم يتم العثور على تعليقات


News Card Generator