মধ্যপ্রাচ্যে টান টান উত্তেজনার মধ্যে এবার নিজেই ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, “আমরা অনেক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছি, বেদনাদায়ক ক্ষয়ক্ষতি।” ইরানের সঙ্গে চলমান সামরিক উত্তেজনা ও পাল্টা হামলার প্রেক্ষাপটে এই বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১৮ জুন) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক আবেগঘন ভাষণে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক এবং প্রতিরক্ষা বাহিনী— উভয়েই বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ভাষণটি ইসরায়েল সরকারের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক পদক্ষেপ ও ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। গত শুক্রবার ভোরে ইরানের উপর এক ভয়াবহ হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী, যাতে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর একাধিক শীর্ষ কমান্ডার নিহত হন। এই হামলাকে তেহরান সরাসরি ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে আখ্যা দেয়।
এর জবাবে ইরানও আর দেরি করেনি। পরদিন রাতেই ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালানো হয়। এই পাল্টা আঘাতে ইসরায়েলের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে, বহু স্থাপনা মাটির সঙ্গে মিশে যায়। হতাহত হয়েছে বহু মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তাঁর ভাষণে এই মানবিক বিপর্যয় নিয়ে বলেন, “ইসরায়েলি জনগণ প্রতিনিয়ত বেদনাদায়ক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের সন্তান, আমাদের সেনা, আমাদের পরিবার হারাচ্ছি। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই লড়াই শুধু অস্ত্রের নয়, এই লড়াই আমাদের জাতিগত অস্তিত্বের। যারা আমাদের ধ্বংস করতে চায়, তাদের মুখোমুখি হয়ে আমরা লড়ছি। কিন্তু এর মূল্য খুবই ভারী।”
নেতানিয়াহু তাঁর বক্তব্যে প্রতিশোধের ব্যাপারে সরাসরি কিছু না বললেও, আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আরও বড় প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। তিনি বলেন, “আমরা ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের ধৈর্যেরও সীমা আছে। যারা আমাদের ক্ষতি করেছে, তাদের যেন বোঝাতে হবে—ইসরায়েল দুর্বল নয়।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, পরবর্তী ধাপে ইসরায়েল হয়তো আরও বড় সামরিক অভিযানের দিকে অগ্রসর হতে পারে।
এই মুহূর্তে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা শুধু দ্বিপাক্ষিক সীমায় সীমাবদ্ধ নেই। এতে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য শক্তিও নড়েচড়ে বসেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চললেও, ইসরায়েল ও ইরান কেউই আপস করতে রাজি নয়। ফলে আগামি দিনগুলোতে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভাষণের শেষে নেতানিয়াহু বলেন, “আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক। কিন্তু আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—ইসরায়েল মাথা নিচু করবে না। আমরা লড়ব, টিকব এবং বিজয় অর্জন করব।”