বহুল আলোচিত যুদ্ধাপরাধ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন। বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) প্রিজন সেল থেকে ছাড়া পান তিনি। মুক্তি পাওয়ার পর হাসপাতালের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন।”
এটিএম আজহারুল ইসলামের এই বক্তব্য মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তার এই মন্তব্যকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা ও বিতর্ক।
দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া ও মুক্তির পটভূমি:
২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। তার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। পরে আপিল বিভাগ সেই দণ্ড বহাল রাখলেও শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে পিজি হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সরকারি পক্ষ থেকে জানানো হয়, আদালতের নির্দেশনা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত মতামতের ভিত্তিতে তাকে ‘প্রক্রিয়াগতভাবে’ মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে রাজনৈতিক মহলে এটিকে ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে—এই মুক্তি কি শুধুই আইনি, নাকি এর পেছনে রয়েছে গভীর রাজনৈতিক সমীকরণ?
জামায়াতের প্রতিক্রিয়া:
এটিএম আজহারের মুক্তির খবর নিশ্চিত হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। এক বিবৃতিতে দলটি তার মুক্তিকে “ন্যায়বিচারের বিজয়” হিসেবে আখ্যায়িত করে। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে একজন নিরপরাধ মানুষ অন্যায়ভাবে কারাবন্দি ছিলেন। আজ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত কেউ কীভাবে মুক্ত হন, তা নিয়ে জনগণের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে।”
জনমত ও বিশ্লেষকদের মত:
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটিএম আজহারের মুক্তি নিয়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন এটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত, কেউ আবার একে “বিচার ব্যবস্থার আপস” হিসেবে দেখছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, “এই মুক্তির সময়কাল, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও মন্তব্য—সবকিছুই এক নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এটিকে কেবল আইনি বিষয় হিসেবে দেখা কঠিন।”
ভবিষ্যৎ কী?
এটিএম আজহারের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তিনি কি আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন? জামায়াত কি তাকে সামনে নিয়ে নতুন করে রাজনীতির মাঠে নামবে? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা হলেও তার মুক্তির মাধ্যমে জামায়াতের রাজনীতি নতুন মোড় নিতে পারে বলেই অনেকের বিশ্লেষণ।
এটিএম আজহারুল ইসলামের পিজি হাসপাতাল থেকে মুক্তি পাওয়া শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত ঘটনাই নয়; এটি দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও বিচার ব্যবস্থার জটিল সমীকরণকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে। তার সেই এককথায় বলা বক্তব্য—"আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন"—একটি সাধারণ বাক্য হলেও, এর রাজনৈতিক প্রতিধ্বনি বহুদূর পর্যন্ত যাবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।