মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পেয়েছে যখন ইরান প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তেহরান বলেছে, আমেরিকা যদি ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে সংঘাতে জড়ায়, তাহলে তার ফলাফল ভয়াবহ হবে। এমনকি ইরান জানিয়েছে, তাদের সেনাবাহিনীর হাতে এখন “সব অপশন খোলা” রয়েছে, যা প্রয়োগে এক মুহূর্তও দেরি করবে না।
ইরানের ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম ঘারিবাবাদি দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন:“জায়নবাদী রেজিমের (ইসরায়েল) পক্ষ নিয়ে যদি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ নেয়, তাহলে আক্রমণকারীদের শিক্ষা দিতে এবং ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় আমাদের সব অস্ত্র প্রয়োগ করা হবে।”
তাঁর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়েছে—যুদ্ধ হলে তেহরান কোনোভাবেই পিছু হটবে না। যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সংঘাত থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইরানের সামরিক নেতৃত্বের হাতে রয়েছে ‘সবধরনের প্রস্তুতি’।
যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করার পর ইরান বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকালে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
সবচেয়ে আলোচিত আঘাতটি হয়েছে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় বিরশেবা শহরের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারে, যেখানে সাধারণ রোগী ও চিকিৎসকরা ছিলেন।
এই হামলার পরপরই ইসরায়েলজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হাসপাতালগুলোতে জরুরি সতর্কতা জারি হয় এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরাসরি এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন—
“আজ সকালে ইরানের সন্ত্রাসীরা বিরশেবার সোরোকা হাসপাতাল এবং মধ্য ইসরায়েলের সাধারণ মানুষের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে। আমরা তেহরানের অত্যাচারীদের থেকে পুরো মূল্য আদায় করব।”
এই বার্তাটি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (X)-এ পোস্ট করেন। বিশ্ববাসীর কাছে এই বার্তাটি ছিল সরাসরি যুদ্ধের ঘোষণা বলেই বিশ্লেষণ করছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
ইরানের এই আক্রমণের পর আর কোনো দ্বিধা না রেখে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যৌথভাবে ঘোষণা দেন—
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে “কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা হামলা জোরদার” করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই ঘোষণার ফলে যুদ্ধ এখন আর কেবল কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই—দুই দেশই প্রস্তুত হয়ে গেছে সরাসরি বড় মাপের সংঘর্ষে জড়াতে।
বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ—এই যুদ্ধ যদি বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য তথা বিশ্ব অর্থনীতিতে ভয়ানক প্রভাব ফেলবে।
বিশ্বশক্তিগুলো এখন কূটনৈতিকভাবে এই সংঘাত থামাতে চেষ্টা করলেও বাস্তবতা অনেক ভয়াবহ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে নামে, তাতে মধ্যপ্রাচ্য পুরোপুরি আগুনের লেলিহান শিখায় পরিণত হবে।
ইরানের হুমকি কেবল কথার কথা নয়—তাদের সামরিক সক্ষমতা ও আঞ্চলিক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে এখন অনেক দেশই চিন্তিত।
ইরানের হুঁশিয়ারি এবং ইসরায়েলের পাল্টা জবাবের ধরন দেখে সেটাই অনুমান করছেন অনেক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক।
বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে—যুক্তরাষ্ট্র এই উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে কী পদক্ষেপ নেয়।
তেহরান যদি কথামতো “সব অপশন” বাস্তবায়ন শুরু করে, তাহলে ইতিহাসের ভয়াবহতম সংঘাতে পরিণত হতে পারে এই যুদ্ধ।