আকাশ প্রতিরক্ষায় ই রা নে র ভরাডুবি, রা শি য়া র যে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার খেসারত..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরান রাশিয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার ফলেই যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলি আকাশ হামলায় ভেঙে পড়ল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। পুতিন বললেন, ইরান আগ্রহ দেখালে আজ এমন পরিস্থিতি নাও হতো।..

আকাশ প্রতিরক্ষায় রাশিয়ার সাহায্য না নেওয়ায় চরম মূল্য দিচ্ছে ইরান — পুতিনের বিস্ফোরক মন্তব্য

মধ্যপ্রাচ্য যেন প্রতিদিন নতুন এক অস্থিরতার দিকে এগোচ্ছে। তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ—ইরানের উপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমন্বিত আকাশ হামলা। একাধিক পারমাণবিক স্থাপনায় হানা দিয়ে দেশটির সামরিক প্রস্তুতি এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কার্যত অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। এ ঘটনার পরপরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

তিনি বিস্ফোরক দাবি করেছেন, এ বছরের জানুয়ারিতে ইরান-রাশিয়ার কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তির সময় মস্কো তেহরানকে যৌথভাবে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু ইরান সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। পুতিনের বক্তব্য অনুযায়ী, “আমরা আমাদের ইরানি বন্ধুদের আকাশ প্রতিরক্ষা নিয়ে একসাথে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি, এমনকি আলোচনার প্রয়োজনও মনে করেনি।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান যদি রাশিয়ার প্রস্তাবে সম্মত হতো, তাহলে বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা হয়তো অনেকটাই সুরক্ষিত থাকত। কারণ রাশিয়ার উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিশেষ করে এস-৩০০ বা এস-৪০০ সিস্টেম যুক্ত থাকলে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলি হামলা প্রতিহত করা সম্ভব হতো।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “এটি আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।”

ইরান থেকেও এসেছে জোরালো প্রতিক্রিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, “এই হামলা জাতিসংঘ সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইনকে চরমভাবে উপেক্ষা করেছে। এর পরিণতি ইরান নির্ধারণ করবে। আত্মরক্ষার অধিকার আমাদের আছে এবং প্রয়োজনে কঠিন জবাব আসবে।”

হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা—নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহান। এগুলোই ইরানের পরমাণু কর্মসূচির মূল কেন্দ্র। একই সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দেশটির ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়।

ইসরায়েলের দাবি, এই আক্রমণে ইরানের অন্তত ১৫টি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংস হয়েছে। ব্যবহৃত হয়েছে অত্যাধুনিক ড্রোন ও দূর-নিয়ন্ত্রিত অস্ত্র ব্যবস্থা। তারা আরও জানায়, হামলায় বিমানঘাঁটির রানওয়ে, বাঙ্কার ও জ্বালানি সরবরাহকারী যানবাহন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইরানের F-১৪, F-৫ এবং AH-১ ধরনের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংস হওয়ার খবর দিয়েছে ইসরায়েল। এর ফলে দেশটির সামরিক আকাশ অভিযানে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যকে অনেকেই রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে দেখলেও এটিতে এক ধরনের কূটনৈতিক চাপও লক্ষ্য করা যায়। পুতিন কার্যত ইরানকে জানিয়ে দিলেন—তাদের ভুল সিদ্ধান্তই আজ এই ভয়াবহ ক্ষতির জন্য দায়ী।

এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক পরিসরে ইরানের অবস্থান আরও চাপে পড়বে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আর ইরানকেও হয়তো ভবিষ্যতে রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর দিকে যেতে হতে পারে।

যুদ্ধ এবং কূটনীতির এই কড়াল খেলায় ইরানের এক মুহূর্তের ‘না’ বলা সিদ্ধান্ত তাকে এনে দিয়েছে বিরল এক বিপর্যয়। সময়মতো রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা করলে হয়তো আজকের এই পরিণতি এড়ানো যেত। এখন দেখার বিষয়, ইরান কীভাবে এই ক্ষয়ক্ষতি সামাল দেয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে কী ধরনের কৌশল নেয় তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে।

Không có bình luận nào được tìm thấy