close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

আজ ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন অর্থ উপদেষ্টা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় বাজেট আজ পেশ করছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যসহ অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ওপর বিশে..

দেশের ৫৪তম বাজেট ঘোষণা আজ: অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশার বাজেট

আজ সোমবার, ২ জুন ২০২৫—একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে। এদিন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বিশাল জাতীয় বাজেট পেশ করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এই বাজেটকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আলোচনার ঝড়।

এই বাজেট শুধু টাকার অঙ্কেই বড় নয়, বরং এটি একটি সময়োচিত ও সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের ৫৪তম বাজেট এটি, তবে এটি আরও বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ঘোষিত প্রথম বাজেট।

পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট: শেখ হাসিনার পতন ও নতুন দিকনির্দেশনা

ছাত্র-জনতার দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। অর্থনৈতিক চাপে জর্জরিত দেশকে পুনরায় স্থিতিশীলতার দিকে ফিরিয়ে নেওয়ার বড় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় এই সরকার। সেই লক্ষ্যেই আজকের বাজেট—যা একদিকে যেমন আর্থিক শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা করবে, অন্যদিকে জনসাধারণের প্রত্যাশাও পূরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাজেটের মূল লক্ষ্য ও অগ্রাধিকার

নতুন এই বাজেটে যে বিষয়গুলোতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা হলো—

  • মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ: বাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে ভর্তুকি ও নীতিগত পদক্ষেপ

  • নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি: বেকারত্ব হ্রাসে সরকার ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ

  • ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ: ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে নীতিমালার সংস্কার ও কর কাঠামোর সরলীকরণ

  • আর্থিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা: বাজেট ঘাটতি কমানো ও রাজস্ব আদায়ের কার্যকর কৌশল

  • বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) আকৃষ্টকরণ: প্রতিযোগিতামূলক সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনার মাধ্যমে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি

  • সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী: নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ ও কর্মসূচি জোরদার

বৈশ্বিক ও দেশীয় অনিশ্চয়তার মধ্যেও সাহসী বাজেট

বিশ্বজুড়ে মন্দা, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং জ্বালানি সংকটের মতো বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেই এই বাজেট পেশ করা হচ্ছে। দেশীয় পর্যায়ে কর কাঠামোর দুর্বলতা, ঋণের চাপ এবং রেমিট্যান্স প্রবাহে স্থবিরতাও রয়েছে। তারপরও সরকার নতুন বাজেটে দেখিয়েছে আত্মবিশ্বাস ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এই বাজেট সম্পর্কে বলেন, “আমরা বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছি। জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কাঠামোর স্থিতিশীলতা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

বাজেট ঘাটতি ও রাজস্ব আদায়ের কৌশল

৭ লাখ ৯০ হাজার কোটির বাজেটের বিপরীতে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। বাকি অংশ ঘাটতি হিসেবে ধরা হয়েছে, যা বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ ঋণ এবং বন্ডের মাধ্যমে পূরণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও এনবিআরকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জনগণের প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষকদের মূল্যায়ন

নবনিযুক্ত সরকারের বাজেট নিয়ে জনসাধারণের মাঝে একদিকে যেমন কৌতূহল, অন্যদিকে রয়েছে শঙ্কা ও প্রত্যাশার মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অর্থনীতিবিদদের মতে, “এই বাজেট যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তবে এটি দেশের অর্থনীতিকে একটি নতুন ধারায় প্রবাহিত করতে পারবে।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যেই বাজেট সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, এই বাজেটের মাধ্যমে সরকার জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে, যদি প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে দৃঢ়তা দেখায়।


 

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট কেবলমাত্র একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নয়—এটি দেশের রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রতীক। অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। আজকের বাজেটের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ দিক নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হলো—যা ইতিহাসে ‘পরিবর্তনের বাজেট’ হিসেবেই হয়তো স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Ingen kommentarer fundet