close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

আগামীকাল ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ব্যাংক হলিডের কারণে ১ জুলাই দেশের সব লেনদেন বন্ধ থাকবে। তবে কেন এই দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করা হয়, তার পেছনের কারণ জানলে অনেকেই চমকে উঠবেন।..

আগামীকাল, মঙ্গলবার (১ জুলাই) সারাদেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে বন্ধ থাকবে লেনদেন। ‘ব্যাংক হলিডে’ উপলক্ষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও জুন মাসের শেষ দিন অর্থাৎ ৩০ জুন, ব্যাংকগুলো অর্ধবার্ষিক হিসাব শেষ করে, আর তার পরদিন ১ জুলাই পালন করা হয় এই ‘ব্যাংক হলিডে’। এতে ব্যাংকিং কার্যক্রম যেমন বন্ধ থাকবে, তেমনি বন্ধ থাকবে শেয়ারবাজারেও লেনদেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবছর ১ জুলাইকে ব্যাংক খাতে “অর্ধবার্ষিক সমাপনী দিন” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সময় প্রতিটি ব্যাংক তাদের বিগত ছয় মাসের আর্থিক হিসাব-নিকাশ মিলিয়ে একটি অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে। এই জটিল কাজটি নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সেদিন লেনদেন বন্ধ রেখে শুধুমাত্র প্রশাসনিক ও হিসাব সংক্রান্ত কাজ চালিয়ে যায় ব্যাংকগুলো।

১ জুলাই ব্যাংকের কোনো শাখা থেকে টাকা জমা, উত্তোলন, চেক নিষ্পত্তি, ডিমান্ড ড্রাফট, পে অর্ডার, আন্তঃব্যাংক লেনদেন, এটিএম ট্রানজেকশন কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও কোনো কার্যক্রম সম্ভব হবে না। এমনকি অনলাইন ব্যাংকিং সেবাও সীমিত থাকবে। ফলে সাধারণ গ্রাহকদের জন্য এই দিনটি একপ্রকার সম্পূর্ণ লেনদেনবিহীন সময় হিসেবেই বিবেচিত হবে।

যদিও গ্রাহকসেবা বন্ধ থাকবে, তবে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শাখা সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। এসব শাখায় শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক কাজ ও হিসাব সংক্রান্ত কার্যক্রম চলবে। গ্রাহকদের কোনো ধরনের সেবা এই শাখাগুলোতেও দেওয়া হবে না।

‘ব্যাংক হলিডে’র প্রভাব পড়বে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ — ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)-এর ওপরও। ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে শেয়ারবাজারের প্রায় সব ধরনের লেনদেন সম্পন্ন হয় বলে ব্যাংক বন্ধ থাকলে স্বাভাবিকভাবেই শেয়ারবাজারও কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ফলে ১ জুলাই এ দুটি স্টক এক্সচেঞ্জেও কোনো লেনদেন হবে না। তবে অফিসিয়াল কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালু থাকবে।

ব্যাংক খাতের হিসাববছরের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ তারিখ হচ্ছে ১ জুলাই এবং ৩১ ডিসেম্বর। যেমন, ৩১ ডিসেম্বর পালন করা হয় বার্ষিক হিসাব সমাপনী দিবস। সেদিনও ব্যাংকগুলো তাদের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য লেনদেন বন্ধ রাখে। মূলত হিসাবনিকাশে নির্ভুলতা বজায় রাখতে ও হিসাব রিভিউয়ের কাজ নির্বিঘ্নে করতে এ দুই দিনকে ব্যাংক হলিডে হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

অনেকেই জানতে চান, ঠিক কেন ব্যাংকগুলো এই দিনটিকে লেনদেন বন্ধ রেখে আলাদা করে পালন করে? আসলে প্রতিটি ব্যাংকের শত শত শাখা থেকে প্রতিদিন যে লেনদেন হয়, সেগুলোর বিস্তারিত হিসাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। অর্ধবার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত করতে হলে এসব তথ্য একত্র করে মিলিয়ে ব্যালেন্স শিট তৈরি করতে হয়। এটি একটি সময়সাপেক্ষ ও জটিল প্রক্রিয়া। আর এই হিসাব নির্ভুল ও সময়মতো প্রস্তুত করতেই ব্যাংকগুলো একটি নির্দিষ্ট দিনকে শুধু অভ্যন্তরীণ কাজের জন্য বরাদ্দ রাখে — যাকে আমরা ‘ব্যাংক হলিডে’ বলি।

১ জুলাই যেহেতু ব্যাংকিং ও শেয়ারবাজার লেনদেন বন্ধ থাকবে, তাই যেকোনো জরুরি ব্যাংকিং কার্যক্রম — যেমন টাকা উত্তোলন, স্থানান্তর, বিল পরিশোধ বা বড় অঙ্কের মোবাইল ব্যাংকিং — এগুলো ৩০ জুনের মধ্যেই সেরে ফেলার পরামর্শ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এছাড়া পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকায় বিনিয়োগকারীদেরও কোনো ধরনের শেয়ার বায়-সেল অর্ডার দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

ব্যাংক হলিডে শুধুমাত্র একটি বন্ধের দিন নয় — বরং এটি ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে আরও স্বচ্ছ, নির্ভুল ও সময়োপযোগী রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হিসাব সমাপনী দিন। তাই এ দিনটিকে কেন্দ্র করে গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা থাকা জরুরি। ব্যাংকিং জগতে যারা কাজ করেন, তাদের কাছে এই দিনটি অর্থনৈতিক ‘অন্তঃচোখে পর্যালোচনার দিন’। আর তাই প্রতি বছর ১ জুলাই যেন হয় নিরবচ্ছিন্ন প্রস্তুতির দিন — তাতে দেশের আর্থিক ভিত্তি আরও মজবুত হয়।

Walang nakitang komento


News Card Generator