close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

আদানি বিদ্যুৎ বিল ৩ কোটি ডলার পরিশোধের পরও ৪,৩০০ কোটি টাকা বকেয়া..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ২৬ টাকার বেশি। অন্যদিকে, কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে প্রতি ইউনিট খরচ পড়ে ১৩ টাকা।..

ভারতের আদানি পাওয়ারের বকেয়া পরিশোধ নিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর সঙ্গে চলমান বিরোধের মধ্যে ৩ কোটি ডলার বা ৩৬৬ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এই অর্থ পরিশোধের পরও আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। তবে আদানির দাবি, বর্তমানে পিডিবির কাছে তাদের সুদসহ মোট ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা (৩৫ কোটি ডলার) পাওনা রয়েছে। বকেয়া বিলের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতেই এই আংশিক পরিশোধ করা হলো।

বকেয়া বিল নিয়ে আদানি পাওয়ার ও পিডিবির মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। এই বিরোধের জেরে গত ৩০ অক্টোবর আদানি জানিয়েছিল, তাদের বিরোধপূর্ণ বিলের পরিমাণ ৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার। একইসঙ্গে ১০ নভেম্বরের মধ্যে ২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার বকেয়া পরিশোধ করা না হলে ১১ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল আদানি। তবে, তারা এ সময়েও বাংলাদেশকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে বলে উল্লেখ করে।

আদানির এমন কঠোর চিঠির পর বাংলাদেশ সরকার নড়েচড়ে বসে এবং বিদ্যুৎ বিভাগ দফায় দফায় বৈঠক করে। পাল্টা জবাবে আদানিকে কড়া চিঠি দিয়ে বলা হয়—হুট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম এ বিষয়ে বলেন, “একটা সমাধান আপাতত হয়েছে। দেখা যাক কি হয়। এর বেশি কোনো মন্তব্য করা যাবে না”। বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার কেন যেন বিষয়টি গোপন রাখতে চাইছে এবং এ ব্যাপারে আইনগত মতামতও নেওয়া হচ্ছে।

আদানি পাওয়ারের সঙ্গে পিডিবির বিরোধের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো কয়লার দাম নির্ধারণে তাদের কারসাজির অভিযোগ। পিডিবির হিসাবে, কেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম টনপ্রতি ৬৫ ডলার হলেও আদানি সেটি ৮০ ডলার ধরছে।

নিয়মিতভাবে দুই পক্ষের হিসাবে প্রতি টনে ১৫ থেকে ২০ ডলারের ফারাক থাকছে। আদানি এই বিরোধ নিষ্পত্তি না করেই পুরো বিল চাইছে, যার ফলে এ পর্যন্ত ২৩৪ মিলিয়ন ডলার বিরোধপূর্ণ বিল হিসাবে গণ্য হয়ে আছে।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন চুক্তি ও বিল পরিশোধ করার ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা বলে আসছে।

৩ কোটি ডলার পরিশোধের পরেও আদানি পাওয়ার বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। সোমবার তারা পিডিবিকে ৮৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। আদানির মুখপাত্র মঙ্গলবার জানান, তারা পিডিবির সঙ্গে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি অনুযায়ী সব শর্ত মেনে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায়।

এজন্য তারা পিডিবিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বকেয়া বিল পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা যায়। মুখপাত্র যুগান্তরকে জানান, পিডিবির কাছে এখন আদানির স্বাভাবিক বিল (বিরোধপূর্ণ নয়) সুদসহ ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বা ৩৫ কোটি ডলার পাওনা আছে।

আদানির এই পাওনা দাবির মধ্যেই জানা যায়, বিরোধপূর্ণ বিল নিয়ে তিন মাস আগে আদানির মালিক গৌতম আদানি বাংলাদেশে গোপন সফর করেছিলেন। এ সময় বিদ্যুৎ সচিব ফারজানা মমতাজের সঙ্গে দেখা করে তিনি সব টাকা ছাড় করার কথা বলেন। অন্যথায়, চুক্তি অনুযায়ী বিষয়টি আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দেন তিনি।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ অনেকটা আদানির বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কারণ কোম্পানিটি ১৬০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।

তবে দেশীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো বলছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার হুমকির পর আদানিকে ৩ কোটি ডলার দেওয়া হলেও পিডিবির কাছে তাদের ৫-৬ মাসের বিল বছরের পর বছর বকেয়া পড়ে আছে। সব মিলিয়ে দেশীয় কোম্পানিগুলোর এই বকেয়া বিল প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার মতো।

যদিও আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলে দেশীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সরবরাহ দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালু করতে হবে। এর প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ২৬ টাকার বেশি। অন্যদিকে, কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে প্রতি ইউনিট খরচ পড়ে ১৩ টাকা।

শীত মওসুমে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সহজ হচ্ছে। গরমের দিনে যেখানে দুপুরে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার মেগাওয়াটের বেশি, সেখানে মঙ্গলবার দুপুরে সরবরাহ দেওয়া হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে আদানি গড্ডা থেকে পাঠিয়েছে ৮৩৬ মেগাওয়াট।

আদানি পাওয়ারকে ৩ কোটি ডলার পরিশোধের সিদ্ধান্তটি আপাতদৃষ্টিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখার একটি অন্তর্বর্তীকালীন সমাধান হলেও, এটি বৃহত্তর সমস্যার ইঙ্গিত বহন করে। একদিকে কয়লার দাম নিয়ে আদানির সঙ্গে পিডিবির বিরোধ চলমান, অন্যদিকে দেশীয় কোম্পানিগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার বিতর্কিত বিলের ক্ষেত্রে আইনগত মতামত নিলেও, আদানির চাপ মোকাবিলা এবং দেশের বিদ্যুৎ খাতকে স্থিতিশীল রাখার চ্যালেঞ্জ এখনও বিদ্যমান।

لم يتم العثور على تعليقات


News Card Generator