আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আজ এক বিশেষ সূচনা বক্তব্যে শহীদ আবু সাঈদের সাহসিকতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার প্রেক্ষাপটে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ এ বক্তব্য প্রদান করা হয়।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, "বাংলা পঞ্জিকায় দিনটি ছিল আষাঢ়ের শেষ দিন। সেদিন সকালে রংপুরের আকাশে বৃষ্টি ঝরছিল। কিন্তু সব উপেক্ষা করে 'কোটা না মেধা, মেধা মেধা' স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে উত্তরের শহর।" বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বিশাল প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা।
নগরীর লালবাগ এলাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে বিক্ষোভ মিছিল এগিয়ে এলে শিক্ষার্থীদের বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এছাড়াও মামলার পাঁচ নম্বর আসামি মো. আরিফুজ্জামান ওরফে জীবনের নেতৃত্বে পাঁচজন পুলিশ সদস্য স্টিল ও কাঠের লাঠি দিয়ে আবু সাঈদের মাথায় আঘাত করেন। এতে তার মাথা থেকে রক্ত বের হয়।
চিফ প্রসিকিউটর তার বক্তব্যে বলেন, "সেদিন আষাঢ়ের বাদল কিংবা মেঘ না থাকলেও বৃষ্টি ঝরেছিল। সে বৃষ্টি গুলির।" পুলিশের লাঠিচার্জে রক্তাক্ত হয়েও আবু সাঈদ বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু তারপরও তার বুকেই গুলি চালানো হয়।
আবু সাঈদকে গুলি করার দুটি ভিডিও প্রদর্শনের সময় তার বাবা মকবুল হোসেন মনিটরের দিকে তাকিয়ে অশ্রুসিক্ত হন। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার চান।
এই মামলায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়। তাদের মধ্যে গ্রেফতার ছয়জন ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। এরা হলেন- বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান রাসেল, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক সাবেক কর্মচারী মো. আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক এএসআই আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।
আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেই কোটা সংস্কার আন্দোলন আরও গতিশীল হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে অভিযোগ জমা পড়ে। এসব অপরাধের বিচার হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
চিফ প্রসিকিউটরের এই সূচনা বক্তব্যে আবু সাঈদের সাহসিকতা ও ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব আরও একবার প্রমাণিত হলো। আগামীকাল এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।