রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে অবশেষে বড় অগ্রগতি দেখা গেছে। আজ সোমবার (১৯ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ তার হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামসহ মোট ৩০ জনকে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি খুদে বার্তার মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। তিনি লেখেন, “আবু সাঈদ হত্যা মামলার ফরমাল চার্জ ট্রাইব্যুনাল-২-এ জমা দেওয়া হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, গতকাল রবিবারই অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার কথা ছিল। তবে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সরকারি জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকায় তা জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। অবশেষে আজ সকালেই আনুষ্ঠানিকভাবে এটি দাখিল করা হলো।
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই দুপুরে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের উত্তাল মুহূর্তে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের পার্ক মোড় এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। তার এই নির্মম হত্যাকাণ্ড সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। ছাত্রছাত্রী ও নাগরিক সমাজে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল।
আন্দোলনের সময় ছাত্রদের দাবি ছিল সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা প্রথার সংস্কার, যা তারা বৈষম্যমূলক মনে করতেন। সেই আন্দোলনে সাঈদের বলিদান এখনো তরুণ প্রজন্মের হৃদয়ে স্পষ্টভাবে জেগে আছে।
২৪ জুন, এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তদন্তে হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম উঠে আসে। সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম ছাড়াও আরও ২৯ জনের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সূত্র বলছে, মামলার চার্জ শুনানির দিন তারিখ শিগগিরই নির্ধারণ করা হবে। তার আগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে আদালত পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
অভিযোগপত্র দাখিলের মাধ্যমে আবু সাঈদের পরিবার এবং আন্দোলনকর্মীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। পরিবার বলছে, “আমরা এখন সুবিচারের আশায় আছি। যেন এই নির্মম হত্যার বিচার দ্রুত হয় এবং দোষীরা শাস্তি পায়।”
এই মামলার গুরুত্ব শুধু একটি হত্যাকাণ্ডে সীমাবদ্ধ নয়—এটি একটি প্রজন্মের প্রতিবাদ, আত্মত্যাগ এবং ন্যায়বিচারের সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
		
				
			


















