সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের হঠাৎ দেশত্যাগ নিয়ে চলমান রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বৃহস্পতিবার বিকেলে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন।
তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আবদুল হামিদের দেশত্যাগে যারা সহায়তা করেছে, তাদের শুধু চাকরি থেকে পদত্যাগ করলেই হবে না— তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। আমি যদি সেটা করতে না পারি, তবে আমি নিজেই সরে দাঁড়াবো।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্য মুহূর্তেই আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এমন স্পষ্ট, কঠোর ও জবাবদিহিমূলক অবস্থান বর্তমানে প্রশাসনে বিরল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
তিনি আরও বলেন, “আপনারা যে পরিস্থিতিতে আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই তুলনায় এখন অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সাবেক রাষ্ট্রপতির মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির দেশত্যাগ যদি কারও সহায়তায় হয়, তাহলে তা শুধু দায়িত্বহীনতা নয়, এটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করার সামিল। এর তদন্ত হচ্ছে এবং জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে তিনি প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ কিছু গোষ্ঠীর দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ।
আবদুল হামিদের গোপন দেশত্যাগ:
গত ৭ মে, বুধবার রাত ৩টা ৫ মিনিটে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন। তার গন্তব্য এখনো নিশ্চিত নয়, তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে তিনি দুবাই হয়ে ইউরোপের কোনো দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ৯ মাস পর এমন এক উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের গোপনে দেশ ত্যাগ, তাও সরকারি পর্যায়ের কারও সহায়তা ছাড়া, প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছে প্রশাসন ও বিশ্লেষক মহল। সেখান থেকেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, প্রশাসনের ভিতরে কেউ না কেউ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে তাকে সহায়তা করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ:
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এমন সরাসরি বক্তব্য রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নতুন ধরণের উত্তেজনা তৈরি করবে। কারণ, এই বক্তব্য শুধু তদন্তের কথা নয়, দায় স্বীকার এবং দায়িত্ব গ্রহণের স্পষ্ট ঘোষণা। সরকারের ভেতরে যারা এখনো গোপনে সুবিধা আদায় করছেন বা আগের সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের জন্য এটি একটি কড়া বার্তা।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া:
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ মানুষ এই মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে। অনেকে বলছেন, অবশেষে কেউ একজন সত্যিকার অর্থে দায়িত্ব নিচ্ছেন এবং সাহসের সঙ্গে কথা বলছেন। তবে একইসঙ্গে তাদের প্রশ্ন— শুধুই কি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, না কি রাজনীতিবিদদেরও এই শাস্তির আওতায় আনা হবে?
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই হুঁশিয়ারি শুধু একটি বক্তব্য নয়— এটি এক নতুন রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক জবাবদিহির ইঙ্গিত। আবদুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়ে যা যা চাপা থাকছিল, তা এখন খোলামেলাভাবে সামনে আসছে। প্রশাসনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা শক্তিগুলোকে চিহ্নিত করার সময় যেন এসে গেছে।