সরকারি চাকরি আইন বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দপ্তরগুলো। সচিবালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কার্যালয়গুলোতে কার্যত অচলাবস্থা বিরাজ করছে। চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে জনসাধারণের নাগরিক সেবা, অথচ এখনো দৃশ্যমান হয়নি সরকারের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ।
আজ সকাল থেকেই সচিবালয়ে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একইসাথে এনবিআর-এ চলছে তিন ঘণ্টার কলমবিরতি। ৩৯ দিন বন্ধ থাকার পর আজ খুলছে নগর ভবনের বেশিরভাগ কক্ষ, তবে প্রশাসক ও প্রকৌশল বিভাগের কক্ষ এখনও তালাবদ্ধ। আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে এ অচলাবস্থা আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।
সোমবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মূল ফটক অবরোধ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিচে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে ঐক্য ফোরামের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
কর্মসূচিতে অংশ নেন কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবির, মো. নুরুল ইসলাম, নজরুল ইসলামসহ আরও অনেকে। তারা বলেন, সরকারের তরফ থেকে এই কালো আইন সংশোধনের যে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, তা তারা মানবেন না। বরং তারা পুরোপুরি বাতিল চাচ্ছেন এই চাকরি সংশোধনী অধ্যাদেশ।
নূরুল ইসলাম বলেন, “আমরা কোনো সংশোধন চাই না। এটি একেবারে বাতিল করতে হবে। এটি শুধু চাকরিজীবীদের অধিকার হরণ করছে না, জনগণের সেবাকেও অকার্যকর করে তুলেছে।”
টানা ৩৯ দিন তালাবদ্ধ থাকার পর অবশেষে আজ খুলছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবন। তবে পুরোপুরি নয়। শুধুমাত্র কিছু গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কক্ষ খোলা হলেও প্রশাসক ও প্রকৌশলীদের কক্ষগুলো তালাবদ্ধই থাকবে।
আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক মশিউর রহমান বলেন, “ঢাকাবাসীর স্বার্থে নাগরিক সেবা সচল রাখতে আমরা কিছু অংশ খুলছি, কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর থাকবে।”
তিনি আরও জানান, নাগরিক সেবা দিতে—যেমন জন্ম-মৃত্যু সনদ, নাগরিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, ডেঙ্গু প্রতিরোধ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা—এসব গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও আজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার কলমবিরতি পালন করছেন শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর কর্মকর্তারা।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে রাজস্ব সংস্কার নয়, বরং বিলম্ব ও হতাশাই সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে তাঁকে অপসারণ করতে হবে।”
ঐক্য পরিষদ আরো জানায়, আগেও তারা রাজস্ব ভবনে চেয়ারম্যানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে এবং সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, এই দাবি দ্রুত মেনে নেওয়া না হলে রাজস্ব ব্যবস্থাই মুখ থুবড়ে পড়বে।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে পড়লেও, এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো আশ্বাস বা কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এর ফলে সাধারণ জনগণ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে প্রশাসনিক স্থবিরতার ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে।
সরকারি চাকরি সংশোধনী আইন নিয়ে আন্দোলন ক্রমেই আরও বিস্তৃত হচ্ছে। সচিবালয়, এনবিআর, ডিএসসিসি—সবখানেই এখন একই সুর: "কালো আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবেই।"
সরকারি চাকরিজীবীদের এই চলমান আন্দোলন শুধু কর্মস্থলেই সীমাবদ্ধ নেই, এটি এখন ছড়িয়ে পড়েছে নাগরিক জীবনের প্রতিটি স্তরে। আন্দোলনের তীব্রতা ও বিস্তৃতি দেখে এটি স্পষ্ট—এই আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত অচলাবস্থা চলবে, এবং এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।