close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

আ’লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সারাদেশে গণজমায়েতের ডাক

Umme Hani Akter avatar   
Umme Hani Akter
 বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নিয়েছেন।   বৃহস্পতিবার রাতভর প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে ব..

এ বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন  জুলাই অভ্যুত্থানের নেতারা। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে রাজনৈতিক ঐক্য চেয়ে তারা ঘোষণা দিয়েছেন– দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, কর্মসূচির মধ্যে গতকাল রাত ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাসহ তিন দাবিতে শনিবার সারাদেশে গণজমায়েত কর্মসূচি ঘোষণা করেন। দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি চলমান থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, শনিবার বিকেল ৩টায় গণজমায়েত, সারা ঢাকায় ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতা গণজমায়েতে যুক্ত হবেন। সারাদেশে গণজমায়েত হবে জুলাই আন্দোলনের পয়েন্টে। 

এ লড়াই ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশপন্থিদের লড়াই। ৫ আগস্ট জনগণ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার আইনি ভিত্তি দেওয়ার লড়াই। বাকি দুই দাবি হলো– আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করা এবং জুলাই ঘোষণাপত্র জারি। এসব দাবিতে রাতে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন জুলাই ঐক্যের এবি জুবায়ের। ইনকিলাব মঞ্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে অভ্যুত্থান নিয়ে ভিডিওচিত্র প্রদর্শনী করে।

শাহবাগের এবারের আন্দোলনে বিএনপি দূরত্ব বজায় রেখেছে। জামায়াতে ইসলামীর মধ্যম সারির নেতাকর্মী বিক্ষোভে যোগ দিলেও দলটি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন এবং হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দলগুলো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের খোলাখুলি দাবি জানিয়েছে। এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দল একই অবস্থান জানিয়েছে।

বিএনপি আগেই জানিয়েছিল– নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। গতকালও একই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কিনা– জনগণ ঠিক করবে। যোগাযোগ করা হলেও জামায়াত নেতারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেননি। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের বিচারে আইন সংশোধনের চিন্তা সরকারের রয়েছে।


সারজিস আলম(এনসিপির মুখ্য সংগঠক) ফেসবুকে লেখেন, ‘বিএনপি এবং তার অঙ্গ সংগঠন ব্যতীত সব রাজনৈতিক দল এখন শাহবাগে। বিএনপি এলে জুলাইয়ের ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়।’

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘শাহবাগের অবস্থান চলমান থাকবে। দলমত নির্বিশেষে আওয়ামী লীগ ও দেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে জুলাইয়ের সব শক্তি এক থাকবে– এটাই প্রত্যাশা। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্লকেড চালু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত না এলে সমগ্র বাংলাদেশ আবারও ঢাকা শহরে মার্চ করবে।’

মামলার আসামি হয়েও আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবরে গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে, এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন । স্লোগান, বিক্ষোভে সারারাত সেখানেই কাটান তারা।

শাহবাগে শাহবাগে : যমুনা থেকে ৩০-২৫ গজ দূরে সড়কের মোড়ে ফোয়ারার সামনে ট্রাকের ওপর নির্মিত মঞ্চে সমাবেশ হয় জুমার পর। এর পর সমাবেশকারীরা শাহবাগে অবস্থান নেন। রাত এবং সকালে জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলী আশরাফ আকনসহ বিভিন্ন দলের নেতারা সংহতি জানান। মাসুদ বলেন, দুপুরের মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

গতকাল নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধে, এনসিপিতে যোগ না দেওয়া অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারাও আগের রাতের মতো শাহবাগের বিক্ষোভে যোগ দেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে  ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের পর সংগঠনটির মিছিল গিয়ে শাহবাগে যোগ দেয় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে।

হেফাজত নেতাদের ডাকে বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা আসেন। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী শাহবাগে যোগ দেন। এতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে শাহবাগমুখী সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। যান চলাচল বিঘ্নিত হলে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। সন্ধ্যার পর শাহবাগ মোড়ের চারদিকেই হাজার হাজার মানুষের জমায়েত ছিল। তারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং জুলাই গণহত্যার বিচার চেয়ে স্লোগান দেন।

যমুনার সামনে সমাবেশ : গতকাল জুমার পরপরই তীব্র রোদ উপেক্ষা করে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন নেতাকর্মীরা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দুটি গাড়ি থেকে সমাবেশস্থলে পানি স্প্রে করা হয়। ওয়াসা পানি সরবরাহ করে। উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, তাপপ্রবাহ শুরু হওয়ায় নাগরিকদের সুবিধার্থে ঠান্ডা পানি স্প্রে করা হচ্ছে। একই কারণে মিন্টো রোডে মানুষের জমায়েতে পানি ছিটানো হয়।

জুমার পর এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফউদ্দিন মাহাদীর কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি-সংবলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। সমাবেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ইন্টেরিমের (অন্তর্বর্তী সরকার) কানে আমাদের দাবি পৌঁছায়নি। তাই আমরা সমাবেশস্থল থেকে শাহবাগ অবরোধে যাচ্ছি। দাবি না আদায় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করব।’

হাসনাত  বলেন, ‘১০০টা ফেরাউন একসঙ্গে করলেও একটা হাসিনা পাওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগকে কেন রাজনৈতিক দল বলা হয়? শুনতে পাচ্ছি, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসার চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে তিনি নাকি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁর বসা উচিত শহীদ মুগ্ধর ভাইয়ের সঙ্গে, শহীদ আবু সাঈদের বাবার সঙ্গে, শহীদ ওয়াসিমের পরিবারের সঙ্গে। আওয়ামী লীগ নামক ভাইরাস নিয়ে এ বাংলাদেশে থাকতে চাই না।’

সমাবেশ থেকে হাসনাত শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আগ পর্যন্ত এই ব্লকেড চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

সমাবেশে বক্তব্য দেন , আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি) সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন, বিএনপির সমমনা দল হিসেবে পরিচিত লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি, ইসলামী যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি তাওহীদুল ইসলাম তুহিন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইউসুফ আহমাদ মানসুর, জুলাই ঐক্যের উদ্যোক্তা এবি জুবায়ের, শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি, জুলাই যোদ্ধা খোকন চন্দ্র বর্মণ প্রমুখ।

এনডিএম মহাসচিব মমিনুল হক, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আব্দুল কাদের, অনলাইনে জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা আসিফ আদনান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতাকর্মীও।

শুরুর দিকে জুলাই ঐক্যের এবি জুবায়ের, মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, ইনকিলাব মঞ্চের শরীফ ওসমান হাদি কর্মসূচিতে অবস্থান নেন। বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে নাহিদ ইসলাম, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন যোগ দেন। একই সঙ্গে শিবিরের দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ সিবগা, আপ বাংলাদেশের আলী আহসান জুনায়েদ, রাফে সালমান রিফাত, মোহাম্মদ হিযবুল্লাহ, খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের নেতা, জুলাইয়ের আহতের একটি দল, জুলাই মঞ্চ, ছাত্রপক্ষসহ বিভিন্ন সংগঠন অংশ নেয়।

বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ : তিন দাবিতে খুলনা নগরীর শিববাড়ী মোড়ে বিপ্লবী ছাত্র-জনতার ব্যানারে ব্লকেড পালন করা হয়। জুমার নামাজের পর বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শিববাড়ী মোড়ে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। কর্মসূচিতে এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি, দ্য রেড জুলাই, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ছাত্রশিবির ও ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

সিলেটে বিক্ষোভ করেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী। বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থানের পর গতকাল বিকেলে আবার একই স্থানে অবস্থান করা হয়। কর্মসূচিতে সংহতি জানায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।

কিশোরগঞ্জে ‘জুলাই বিপ্লবী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। জুমার পরে শহরের শহীদি মসজিদের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন জেলা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন, সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স প্রমুখ। গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বিক্ষোভ হয়েছে। এতে এনসিপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী অংশ নেন।

চট্টগ্রামে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি হয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নগরীর চকবাজার গুলজার মোড়ে এ কর্মসূচি পালন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপি নেতাকর্মী। একই দাবিতে কুমিল্লায় বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। পটুয়াখালী শহরের ঝাউতলা শহীদ হৃদয় তরুয়া চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।

রংপুর, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, ফেনী, হবিগঞ্জ, ঢাকার সাভার, গাজীপুরের টঙ্গীতেও ব্লকেড, সড়ক অবরোধ এবং বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।

এ ছাড়া  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা  বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক আধা ঘণ্টা অবরোধ করেন । আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) বরিশাল ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ মিছিল হয়।


Ingen kommentarer fundet


News Card Generator