বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্ব, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিলেন বিশিষ্ট বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, বহু আলোচিত ৭ মার্চের ভাষণকে যেভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা হিসেবে তুলে ধরা হয়, তাঁর মতে এটি সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল না। বরং, তিনি এটিকে তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ 'রাজনৈতিক আহ্বান' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ডা. জাহেদ উর রহমান তাঁর মতামতের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ইতিহাসকে সাধারণত নিরপেক্ষ বা পুরোপুরি বস্তুনিষ্ঠ (Objective) হিসেবে তুলে ধরা হলেও, বাস্তবতা ভিন্ন। প্রত্যেক লেখক, বিশ্লেষক বা গবেষক তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি বা আদর্শ অনুযায়ী তথ্যকে ব্যাখ্যা করেন। এ কারণে ইতিহাস সবসময়ই 'সাবজেক্টিভ' বা ব্যক্তিনির্ভর রয়ে যায়। তিনি দাবি করেন, বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আমরা কেবল সত্যের কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সত্যে পৌঁছানো কঠিন।
ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ ভিন্ন হওয়ার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, "ভারতীয়রা ১৬ ডিসেম্বরকে তাদের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে, অথচ এটি আমাদের জাতীয় স্বাধীনতার বিজয়।" তাঁর মতে, ইতিহাসের ব্যাখ্যায় এই ধরনের নানা দৃষ্টিকোণ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।
ডা. জাহেদ আরও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে কেবল শেখ মুজিবুর রহমানের নামে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের পথে অনেক অন্যান্য নেতারও গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল, যাদের ইতিহাস প্রায়শই উপেক্ষিত বা বাদ পড়ে যায়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বর্তমান সময়ে আমাদের সন্তানদের 'আওয়ামী লীগ বা ভারতপন্থী' নয়, বরং একটি নিরপেক্ষ 'বাংলাদেশি' দৃষ্টিভঙ্গি থেকে স্বাধীনতার সঠিক ও সমৃদ্ধ চিত্র তুলে ধরা উচিত। তাঁর এই বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবী মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।



















