সিরিয়াল ধর্ষণ ও ভিডিও ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ
বুধবার দুপুরে একটি ধর্ষণ মামলার ভিত্তিতে সোনারগাঁও থানা পুলিশ সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য পাঠায়। মামলার বাদী ও ভুক্তভোগীর মা জানান, নজরুল দীর্ঘদিন ধরে তার মেয়েকে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে আসছিলেন। এছাড়া, তার মেয়েসহ এলাকার আরও অন্তত ৬ জন কিশোরী এই একই ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী মেয়েটি জানায়, প্রতিবেশী এক খালার মাধ্যমে তাকে নজরুল তার বোনের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে বাড়ি ফাঁকা পেয়ে নজরুল মুখ ও হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করেন। পরে মোবাইলে নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ভয় দেখান—কাউকে জানালে তাকে ও তার মাকে হত্যা করা হবে। এরপরও নজরুল বারবার ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে পুনরায় তাকে তার সঙ্গে যেতে বাধ্য করতেন। সর্বশেষ এই মাসের ৩ তারিখ, নজরুল তাকে পেয়ারা বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করেন।
মামলার অভিযোগপত্রে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য:
নজরুল শুধু ধর্ষণই করেননি, বরং স্থানীয় মানুষদের কাছে নগ্ন ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে ভুক্তভোগী মেয়েদের সম্মানহানি করতেন এবং অন্যদের ফাঁদে ফেলতেন। অনেক সময় আত্মীয়দের ব্যবহার করে মেয়েদের তার কাছে নিয়ে আসা হতো।
পরিবারের সহযোগিতা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়া
অভিযোগ রয়েছে, নজরুলের এসব অপরাধে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে তার ছোট বোন শামীমা। এছাড়াও তার মামাতো ভাই স্থানীয় বিএনপি নেতা নোবেল ও সোহেল এবং ভাগিনা জয় তাকে সহায়তা করে আসছিল বলে দাবি করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী পরিবার।
এমনকি, নজরুলের বোন শামীমা সরাসরি বলেন,
আমার ভাইয়ের মেয়েদের নেশা আছে। যা হয়েছে তা আমার ভাইদের (নোবেল ও সোহেল) নিয়ে সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে সে আর এই কাজ করবে না।
আইনের চোখে ধর্ষণ সালিশে নিষ্পত্তিযোগ্য নয়
এই ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপে বিচার ‘সালিশে সমাধান’ চেষ্টার সমালোচনা করে সোনারগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মফিজুর রহমান বলেন—
ধর্ষণের মতো ফৌজদারি অপরাধ কোনোভাবেই স্থানীয় সালিশে নিষ্পত্তি হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ১২ এপ্রিল অভিযোগ পাওয়ার পর পরই তদন্ত শুরু করি এবং ডিভাইস উদ্ধার অভিযানে নামি। নজরুলের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়েছে এবং তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
প্রতিবেশী নারীদের অভিযোগ: নজরুল একজন ‘সিরিয়াল ধর্ষক’
ভুক্তভোগী মেয়েটির ভাষ্যমতে, যে খালা তাকে নজরুলের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাকেও ধর্ষণ করেছেন নজরুল। শুধু তাই নয়, এ পর্যন্ত আরও অন্তত ৬ জন কিশোরী তার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এই ঘটনার তদন্তে নজরুলের রাজনৈতিক পরিচয় ও তার ওপর ভিত্তি করে গঠিত ‘সালিশি প্রভাব’ নিয়ে প্রশাসন কতটা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি—এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে অন্যরাও সাহস পাবে না মুখ খুলতে।