বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগ কিংবদন্তি ও ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট আবারও প্রমাণ করলেন, তিনি শুধু ধনবানই নন, মানবতার প্রতিও সমান দায়বদ্ধ। ৯৪ বছর বয়সেও তিনি সমাজকল্যাণে নিজের সম্পদ বিলিয়ে দিচ্ছেন উদারভাবে। সর্বশেষ দানে, তিনি তাঁর মালিকানাধীন কোম্পানি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের শেয়ার দান করেছেন বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে।
এই একক অনুদান দিয়ে ওয়ারেন বাফেট নিজের তৈরি আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিলেন। ২০০৬ সাল থেকে শুরু হওয়া তাঁর দান কার্যক্রমে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় এককালীন অনুদান।
২০২৫ সালের ২৮ জুন শুক্রবার এই বিশাল অনুদান প্রদান করেন বাফেট। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশটি পেয়েছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, যেটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা, দারিদ্র্য দূরীকরণ, এবং শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে। এই ফাউন্ডেশনকে তিনি দিয়েছেন ৯৪ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার।
অন্যান্য চারটি ফাউন্ডেশন যেগুলো বাফেটের সন্তানদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—
-
হাওয়ার্ড জি বাফেট ফাউন্ডেশন
-
শেরউড ফাউন্ডেশন
-
নোভো ফাউন্ডেশন
-
সুসান থমসন বাফেট ফাউন্ডেশন (তাঁর প্রয়াত স্ত্রীর নামে গঠিত)
এই চারটি ফাউন্ডেশন পেয়েছে প্রতিটিতে প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার থেকে ৯ লাখ ৪৩ হাজার শেয়ার।
এই অনুদান দেয়ার পর ওয়ারেন বাফেটের মোট দান করা অর্থের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াল ৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। এত বিশাল অঙ্কের অনুদান বিশ্ব দাতব্য ইতিহাসে বিরল এক নজির সৃষ্টি করেছে।
এই বিশাল দানের ফলে বাফেটের মোট সম্পদের পরিমাণ এখন দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১৪ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। ফলে তিনি ফোর্বসের ধনী তালিকায় ৫ নম্বর স্থান থেকে নেমে এসে এখন ৬ নম্বরে অবস্থান করছেন।
তবে এই হ্রাস তাঁকে বিন্দুমাত্র বিচলিত করেনি। বরং, তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা—আমি যতদিন বাঁচি, ততদিন মানবতার কল্যাণেই আমার সম্পদ বিলিয়ে যেতে চাই।
২০২৪ সালের জুন মাসেও ওয়ারেন বাফেট ৫৩০ কোটি ডলারের শেয়ার দান করেছিলেন। একই বছর নভেম্বর মাসে নিজের পরিবারের ফাউন্ডেশনগুলোকে তিনি আরও ১১৪ কোটি ডলার অনুদান দেন।
বাফেট আগেই জানিয়ে রেখেছেন, মৃত্যুর পর তাঁর সম্পদের ৯৯.৫ শতাংশ দান করে দেওয়া হবে একটি বিশেষ দাতব্য ট্রাস্টের মাধ্যমে, যার দায়িত্বে থাকবেন তাঁর তিন সন্তান—সুসি (৭১), হাওয়ার্ড (৭০), ও পিটার (৬৭)।
২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে নিজের উইল পরিবর্তন করে তিনি এই ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তবে তিনি এটাও স্পষ্ট করে জানিয়েছেন—মৃত্যুর পরে আর গেটস ফাউন্ডেশন কোনো অনুদান পাবে না।
ওয়ারেন বাফেট একাধিকবার বলেছেন, তিনি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের শেয়ার কখনোই বিক্রি করবেন না। বরং যতদিন বাঁচবেন, ততদিন দান করে যাবেন। বর্তমানে তিনি কোম্পানিটির প্রায় ১৩.৮% শেয়ারের মালিক।
যেখানে বিশ্বজুড়ে অনেক ধনী ব্যক্তি নিজেদের সম্পদের পাহাড় বানাতে ব্যস্ত, সেখানে ওয়ারেন বাফেট এমন একজন মানুষ যিনি বারবার প্রমাণ করেছেন, “মানবতার কল্যাণই শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ।”
৬ হাজার কোটি ডলারের দান শুধু একটি সংখ্যা নয়—এটি এক মহৎ হৃদয়ের প্রতিফলন, এক অনন্য বার্তা গোটা বিশ্বের জন্য।