ইমন সরকার, ভালুকা উপজেলা প্রতিনিধি
বাংলাদেশ হয়তো এখনো জানে না, ময়মনসিংহের ভালুকায় কী ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে গেছে!
শুধু একটি পাঁচ বছরের শিশুর আর্তনাদ নয়—এটি একটি জাতির বিবেক নাড়া দেওয়ার মতো ঘটনা। ভালুকার উথুরা ইউনিয়নের হাতীবেড় গ্রামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ন্যাক্কারজনক ধর্ষণের ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেছে স্থানীয় জনপদ। এখন প্রশ্ন একটাই এই দেশে শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়?
ঘটনাটি ঘটে গত ১০ এপ্রিল বিকেলে পাঁচ বছরের শিশু মেয়েটি বাড়ি থেকে বেরিয়ে মাছের প্রজেক্টের কাছে খেলতে গেলে স্থানীয় নারী লোভী আনারুল এর লালসার শিকার হয় বাচ্চা মেয়েটি। তেঁতুল খাওয়ার লোভ দেখিয়ে মেয়েটিকে নিয়ে কিছুটা সামনে পরিত্যক্ত বাড়ির ভিতরে আমড়া গাছের নিচে মেয়েটির মুখ চেপে ধরে ধর্ষন করে। মেয়েটার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে পালিয়ে যায় ধর্ষক আনারুল। যাওয়ার আগে মেয়েটাকে হুমকি দিয়ে যায়—“কাউকে কিছু বললে প্রাণে মেরে ফেলব।”
শিশুটির চিৎকারে ছুটে আসা মানুষজন তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। শিশুটি কান্নার মধ্যেও নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিভৎস ঘটনার বর্ণনা দেয় জনসমক্ষে।
পরে তাকে প্রাথমিকভাবে ভালুকায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক তাকে ওটিতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান ধর্ষিতার পরিবার। তার মানে ৫ বছরের ধর্ষিতা বাচ্চা শিশুটি এখন জীবন মরণের অন্তীম অধ্যায়ে অবস্থান করছে।
ঘটনার পর এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ধর্ষক আনারুলকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এর একটি ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়—পরিস্থিতি মোড় নেয় আরও ভয়াবহ রূপে।
ধর্ষক আনারুল টাকার প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক দলের নেতার সহযোগীতায় ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দায়ের করে! যার মধ্যে রয়েছে শিশুটির আত্মীয়, প্রতিবেশী ও নিরীহ গ্রামবাসীও।
স্থানীয় সূত্র বলছে, একটি প্রভাবশালী মহল আনারুলকে বাঁচাতে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা ধর্ষণের বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে সামাজিক প্রভাব ও রাজনৈতিক ব্যানার ব্যবহার করছে। অভিযোগ উঠেছে, ভুক্তভোগী পরিবারকে ভয়ভীতি, হুমকি এবং হয়রানির শিকার করা হচ্ছে।
এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণ, অভিভাবক মহল ও সচেতন সমাজে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে এই ঘটনার বিচার চেয়ে প্রশাসনের কাছে দ্রুত হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, তবে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো কঠোর পদক্ষেপ না থাকায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে।
এলাকাবাসীর দাবি, একটি পাঁচ বছরের শিশুর জীবনের সঙ্গে এমন নির্মম বর্বরতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে যেন ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করতে সাহস না পায়—সেটিই এখন সময়ের দাবি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।



















