close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

৪ মাসের শিশুসন্তানকে বিক্রি করে গহনা ও মোবাইল কিনলেন মা

Mamun Sorder  avatar   
Mamun Sorder
স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় চার মাসের কোলের সন্তানকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন স্ত্রী। সেই টাকায় তিনি কিনেছেন পায়ের নূপুর, নাকফুল ও মোবাইল ফোন। তবে পরবর্তীতে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ..

টাঙ্গাইলের মধুপুরে মায়ের হাতে নিজ সন্তান বিক্রির এক হৃদয়বিদারক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে এক মা যখন নিজের রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করেন, তখন নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। স্বামীর তৎপরতা ও পুলিশের অভিযানে অবশেষে উদ্ধার হয় শিশুটি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোপালপুর উপজেলার বলাটা গ্রামের লিটন মিয়ার মেয়ে লাবনী আক্তার লিজার সঙ্গে বছর দুই আগে বিয়ে হয় মধুপুর উপজেলার পুন্ডুরা শেওড়াতলার বাসিন্দা আজম আলীর ছেলে রবিউল ইসলামের। তাদের পরিচয়ের সূত্রপাত ফেসবুকে। সম্পর্ক দ্রুত গড়ায় বিয়েতে। তবে বিয়ের পর সংসারে শুরু হয় টানাপোড়েন।

রবিউলের আর্থিক অস্বচ্ছলতা এবং পারিবারিক টানাপোড়েনের কারণে স্ত্রী লাবনীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। শান্তির লক্ষ্যে রবিউল বাড়ির পাশে আলাদা ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। কিছুটা স্বস্তি ফেরে যখন চার মাস আগে তাদের সংসারে জন্ম নেয় একটি ছেলে—নাম রাখা হয় তামিম।

রবিউল বলেন, “ছেলের জন্মের পর সংসারে কিছুটা শান্তি ফিরেছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে লাবনী তামিমকে নিয়ে তার বোনের বাড়ি ভূঞাপুরে চলে যায়। আমি বারবার বলেও সে আর ফিরে আসেনি। একসময় আমাকে জানায়, সে আর আমার সঙ্গে সংসার করতে চায় না।”

তিনি জানান, তার বাবা গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসার অনুরোধ করেন তিনি। তবু লাবনী ফেরেনি। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রবিউল জানতে পারেন, তার স্ত্রী তাদের সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছেন।

রবিউলের বুদ্ধি ও পুলিশের রাতভর অভিযান

রবিউল জানান, স্ত্রীর কথায় সন্দেহ হওয়ায় তিনি কৌশলে তাকে ভূঞাপুর থেকে পাকুটিয়ায় ডেকে আনেন এবং ঘরে নিয়ে আসেন। সেখানেই লাবনী স্বীকার করে, সে সন্তানকে বিক্রি করেছে।

বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে মধুপুর থানা পুলিশকে জানানো হয়। রাতভর অভিযানের পর শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) শিশুটিকে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

মায়ের অকপট স্বীকারোক্তি

লাবনী আক্তার লিজা বলেন, “আমার মাথা ঠিক ছিল না। আমি মনির নামে এক ব্যক্তির সহায়তায় গত ১০ এপ্রিল ভূঞাপুরের এক ব্যক্তির কাছে ৪০ হাজার টাকায় তামিমকে বিক্রি করি। ওই টাকা দিয়ে মোবাইল ফোন, পায়ের নূপুর আর নাকফুল কিনি। এটা আমার ভুল হয়েছে।”

তার এই স্বীকারোক্তি শুনে স্তম্ভিত এলাকাবাসী। একজন মা কীভাবে নিজের শিশুকে এভাবে বিক্রি করতে পারেন, তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।

ওসি এমরানুল কবীরের বক্তব্য

মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল কবীর বলেন, “রবিউল নামের এক ব্যক্তি আমাদের জানান, তার স্ত্রী সন্তান বিক্রি করেছেন। এরপর আমরা অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করি। শিশুর মা লাবনী আক্তার, ক্রেতা হোসেন আলী ও তার স্ত্রী সোনাবানুকে থানায় আনা হয়েছে। তবে মেয়েটি এখন তার ভুল বুঝতে পারছে। বয়স কম হওয়ায় হয়তো বুঝে ওঠেনি সে কী করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “ভূঞাপুরের অটোরিকশাচালক হোসেন আলী ও তার স্ত্রী সোনাবানু নিঃসন্তান। দীর্ঘ ১২ বছরেও তাদের কোনো সন্তান হয়নি। তারা শিশুটিকে কিনে নিজেদের শ্বশুরবাড়ি ঘাটাইলে নিয়ে যান। এখন শিশুটির পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”


 

একজন মা যখন নিজের রক্তের সন্তানকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন, তখন সমাজ ও মূল্যবোধের জায়গা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এই ঘটনা শুধু একটি পারিবারিক ট্র্যাজেডি নয়, বরং একটি সামাজিক সংকেত—মানসিক স্বাস্থ্য, পারিবারিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার ভয়াবহ প্রতিফলন।

এখন পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার আইনি দিক সামলাচ্ছে। তবে এই ঘটনার পর সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রয়োজন মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও পারিবারিক সহিংসতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ।

Hiçbir yorum bulunamadı