১৭ বছর খাইনি, এখন খাব’, দুই বিএনপি নেতার ফোনালাপ ফাঁ স

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
দলীয় পরিচয়ে ঠিকাদারিতে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা! রাজশাহী ও নওগাঁর দুই বিএনপি নেতার টেন্ডার নিয়ে তীব্র বাকবিতণ্ডার ফোনালাপ ফাঁস, যা রাজনীতির অন্ধকার দিক উন্মোচন করল। বিস্তারিত পড়ুন চাঞ্চল্যকর এই প্র..

বিএনপির নেতাদের দরপত্র দ্বন্দ্ব: ফোনালাপে ‘চাঁদাবাজির’ নগ্ন রূপ ফাঁস!

রাজনীতির অঙ্গনে যখন দলের আদর্শ আর গণতন্ত্রের কথা বলা হয়, তখন হঠাৎ একটি ফোনালাপ সেই মুখোশ খুলে দিলো। ঠিকাদারি নিয়ে চরম দ্বন্দ্বে জড়ালেন রাজশাহী ও নওগাঁ জেলা বিএনপির দুই নেতা। ফোনালাপের মাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেল ক্ষমতার অপব্যবহার আর দলে দলে ভাগ বসানোর মনোভাব।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ফোনালাপে শোনা যায়, রাজপাড়া থানা বিএনপির সদ্য সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান (রুবেল) নওগাঁর বিএনপি নেতা ও ঠিকাদার শাহজাহান আলীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং হুমকি দেন। এই ফোনালাপ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক, উদ্বেগ এবং নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া।

“১৭ বছর খাইনি, এখন খাব”—কীসের ইঙ্গিত?

ফোনালাপের এক পর্যায়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, “১৭ বছর খাইনি, এখন খাব।” এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠে দীর্ঘদিন ধরে দলের ছত্রচ্ছায়ায় থেকেও ‘উপকার’ না পাওয়ার ক্ষোভ। মূল ঘটনা ঘুরে দাঁড়ায় রাজশাহী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের বৃক্ষপালনবিদ কার্যালয়ের একটি দরপত্রকে ঘিরে।

সওজ বিভাগের তরফ থেকে রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি গাছ বিক্রির জন্য ৯টি লট তৈরি করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এই টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে প্রায় ছয় লাখ টাকায় দুটি লটের কাজ পান নওগাঁ জেলার বিএনপি নেতা শাহজাহান আলী।

‘তুই দেখা করিস নাই, খাইতে দিলি না’—স্থানীয় নেতৃত্বের ক্ষোভ

মাহবুবুর রহমান ফোনালাপে অভিযোগ করেন, শাহজাহান কোনো ধরনের যোগাযোগ না করেই দরপত্রে অংশ নিয়ে কাজ পেয়েছেন, যা দলের ভেতরে অনৈতিক বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, “তুই দেখা করিস নাই, খাইতে দিলি না, ১৭ বছর খাইনি, এবার খাব।”

অন্যদিকে শাহজাহান আলী ফোনে শান্তভাবে জবাব দেন, “আমিও তো ১৬ বছর পর একটা কাজ পাইলাম।” এই সংলাপ থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, বিএনপির অভ্যন্তরে ‘উপকারের পালা’ নিয়ে রয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা ও ক্ষোভ।

গণতন্ত্র না গোষ্ঠীতন্ত্র?

বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “একটা দরপত্র নিয়ে এমন আচরণ কাম্য নয়। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।”

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “এটি রাজনীতিতে চাঁদাবাজি ও গোষ্ঠীগত প্রভাব খাটানোর নগ্ন উদাহরণ। গণতন্ত্রের নামে যারা রাজনীতি করেন, তাদের ভেতরের লোভ ও ক্ষমতালিপ্সার প্রকৃত চেহারা উঠে এসেছে এই ফোনালাপে।”

পক্ষদের বক্তব্য

মাহবুবুর রহমান ফোনালাপের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “আমাদের অনেক কর্মী আছে। একটা কাজ হলে তারা প্রত্যাশা করে কিছু পাবে। শাহজাহান দেখা করেনি, তাই ফোনে বলেছি। তবে অশোভন ভাষা ব্যবহার ঠিক হয়নি। রাগের মাথায় হয়ে গেছে।”

ঠিকাদার শাহজাহান আলী বলেন, “ওদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। সড়ক অফিসও ওই এলাকায়। ওদের অনেক কথাই থাকে। আমাকে ফোন করে বলেছে। আমার তো কিছু করার নেই।”

রাজনৈতিক সাংগঠনিক নৈতিকতার প্রশ্ন

এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা দলীয় পরিচয়কে পুঁজি করে কিভাবে সরকারি কাজ ভাগাভাগি করতে চান। এমন আচরণ শুধু দলের ভাবমূর্তিই ক্ষুন্ন করছে না, বরং রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করছে।

এই ফোনালাপের ঘটনা সামান্য কোনো ব্যাক্তিগত দ্বন্দ্ব নয়—এটি রাজনৈতিক অঙ্গনের নৈতিকতা ও আদর্শের অবক্ষয়ের প্রতীক। যখন একজন রাজনৈতিক নেতা বলেন, “১৭ বছর খাইনি, এখন খাব,” তখন প্রশ্ন উঠে—রাজনীতি কী সত্যিই জনগণের সেবার মাধ্যম, না ব্যক্তিগত স্বার্থ পূরণের প্ল্যাটফর্ম?

এখন দেখার বিষয়, বিএনপি কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়, এবং দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় কতটা কঠোর পদক্ষেপ নেয়।

Không có bình luận nào được tìm thấy