১২ দিনে চিঠি! ঢাকার মন্ত্রণালয়ের রেজিস্ট্রি চিঠি পৌঁছাল শুনানির পরদিন, উপস্থিত হতে পারলেন না মুক্তিযোদ্ধার পরিবার!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঢাকা থেকে নোয়াখালীতে একটি রেজিস্ট্রি চিঠি পৌঁছাতে সময় লেগেছে ১২ দিন! এর ফলেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ শুনানিতে অংশ নিতে পারলেন না বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। এই উদাসীনতায় হতাশ ও ক্ষুব..

ডাক দিয়ে যা লয়, তা কি সময়মতো পৌঁছে?" — এমন প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে, বিশেষ করে চাটখিল উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহানের পরিবারে। কারণ, একটি গুরুত্বপূর্ণ রেজিস্ট্রি চিঠি সময়মতো হাতে না পৌঁছানোয় তাঁরা অংশ নিতে পারেননি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ শুনানিতে। এই ঘটনার ফলে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের মান-সম্মান ও ন্যায়বিচারের পথ বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনার শুরু গত মাসে। বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহানের মেয়ে হাছিনা আক্তার একটি আবেদন জমা দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। সেই আবেদনের শুনানির দিন ধার্য হয় ৫ মে, সোমবার। চিঠিটি মন্ত্রণালয় থেকে রেজিস্ট্রি ডাকে প্রেরণ করা হয় ২৪ এপ্রিল, অর্থাৎ শুনানির প্রায় ১১ দিন আগে। অথচ সেই চিঠি হাতে পান ৬ মে, মঙ্গলবার, অর্থাৎ শুনানির ঠিক একদিন পর!

ফলে হাছিনা আক্তার ও তার পরিবার শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। মন্ত্রণালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে প্রেরিত চিঠি এতটা দেরিতে পৌঁছানোয় স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ ও হতাশ তারা।

এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিকেলে যোগাযোগ করা হয় চাটখিল পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার আবুল খায়েরের সঙ্গে। তিনি বিস্তারিত কিছু না বলে চিঠি বিলিকারী আবদুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পরে আবদুর রশিদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “আমার হাতে চিঠি আসে ৫ মে, আর আমি পরদিন ৬ মে চিঠিটি প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেই।”

ডাক বিভাগের এমন ধীরগতির কার্যক্রমে সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারগুলোও এখন প্রশ্ন তুলছে—এত প্রযুক্তির যুগে রেজিস্ট্রি চিঠি কি সত্যিই ১২ দিন সময় নেয়?
যদি নেয়, তবে দায়ভার কে নেবে?
আর যদি না নেয়, তবে দেরির পেছনে কোন অবহেলা, গাফিলতি বা অদক্ষতা কাজ করেছে?

প্রশ্নের মুখে ডাক বিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা:

বাংলাদেশে ডাক বিভাগের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র প্রেরণের ওপর এখনো অনেক মানুষ নির্ভর করেন। বিশেষ করে সরকারি বা বিচারসংক্রান্ত চিঠির ক্ষেত্রে এই নির্ভরতা এখনো বহাল। অথচ সেই ব্যবস্থারই যদি এই অবস্থা হয়, তবে সাধারন মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ আরও কঠিন হয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, "এই ঘটনা নিছক ডাক বিভাগের ব্যর্থতা নয়, এটি একটি প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার বহিঃপ্রকাশ। এর দায় শুধু ডাক বিভাগের নয়, পুরো ব্যবস্থাটির সংস্কার প্রয়োজন।"

⚖️ ন্যায়বিচার বঞ্চনার শঙ্কা:

হাছিনা আক্তার জানিয়েছেন, তিনি খুব কষ্ট পেয়েছেন বিষয়টি নিয়ে। তাঁর ভাষায়,
"আমার বাবার নামের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা শব্দটা শুধু গর্ব নয়, দায়িত্বও বটে। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি এমনভাবে বাধাগ্রস্ত হই, তাহলে রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে সুবিচার করছে না।"

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা পুনরায় আবেদন করবেন এবং চিঠি বিলম্বে পাওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে জানাবেন।


 উপসংহার:

ঢাকা থেকে নোয়াখালীতে রেজিস্ট্রি চিঠি পৌঁছাতে সময় লাগে ১২ দিন—এই বাস্তবতা যদি সত্যি হয়, তবে দেশের হাজারো পরিবার হয়তো এমন অবিচারের শিকার হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। প্রশ্ন উঠছে, ডিজিটাল বাংলাদেশের ডাক ব্যবস্থা এখনো কি analog মনোভাবেই চলছে?


 হাইলাইটস:

  • ২৪ এপ্রিল পাঠানো চিঠি পৌঁছায় ৬ মে

  • ৫ মে ছিল মন্ত্রণালয়ের শুনানির দিন

  • মুক্তিযোদ্ধার পরিবার অংশ নিতে ব্যর্থ

  • ডাক বিভাগ বলছে—চিঠি পেয়েছে ৫ মে, বিতরণ করেছে ৬ মে

  • স্থানীয় জনগণের ক্ষোভ—কেন ১২ দিন?


এই ঘটনা নিছক একটি চিঠির বিলম্ব নয়, এটি একটি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার অনন্য উদাহরণ। এখন প্রশ্ন একটাই—এই অব্যবস্থাপনা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আর কত পরিবার বিচারহীনতার শিকার হবে?

Inga kommentarer hittades


News Card Generator