ঢাকা, ৭ এপ্রিল:
বাংলাদেশের আইন অঙ্গনে একসময় পরিচিত মুখ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ এখন চাঞ্চল্যের কেন্দ্রবিন্দুতে। রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে এক হত্যা চেষ্টা মামলায়। সোমবার (৭ এপ্রিল) রাতের আঁধারে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় চালানো হয় এই গোপন অভিযান।
এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন ডিএমপি উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মো. মহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, “গত ২৭ মার্চ উত্তরা এলাকায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়। মামলায় তুরিন আফরোজ এজাহারভুক্ত আসামি। আমরা তার গতিবিধি নজরদারিতে রেখেছিলাম। আজ সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
তবে এখানেই শেষ নয়। পুলিশের তথ্য মতে, তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা রয়েছে নীলফামারিতে। ফলে তার গ্রেপ্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্ত আরও বিস্তৃত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তুরিন আফরোজ একসময় ছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। তবে পরবর্তীতে এক অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে গোপন সাক্ষাতের অভিযোগে তাকে ট্রাইব্যুনার থেকে অপসারণ করা হয়। এই ঘটনাও তখন ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল দেশের বিচার ও রাজনৈতিক মহলে।
হামলা, ভাঙচুর ও নীলফামারী কানেকশন:
তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে আইনগত অভিযোগের পাশাপাশি রয়েছে একাধিক হামলার ইতিহাস। জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং সরকার পতনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে নীলফামারীর জলঢাকায় তার মেয়ের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেই ঘটনায় স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে, ৭ আগস্ট তার উত্তরার বাসায়ও দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন তিনি। সেই হামলার বিষয়ে তুরিন দাবি করেন, হামলাকারীরা তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং তার মাথার চুল কেটে দেয়। তিনি এও অভিযোগ করেন যে, পরিকল্পিতভাবে তাকে হয়রানি করার জন্য এসব হামলা চালানো হচ্ছে।
আইনজীবী মহলে প্রতিক্রিয়া:
তুরিন আফরোজের গ্রেপ্তারের খবরে আইনজীবী মহল ও সামাজিক মাধ্যমে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ বলছেন, ‘বিচার সবার জন্য সমান’ — আবার অনেকে এই ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও দাবি করছেন।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সবকিছুই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে করা হচ্ছে এবং তদন্তে নতুন তথ্য উঠে এলে, আরও আসামিদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
তুরিন আফরোজ একসময় দেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে তার বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ। গ্রেপ্তার পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে আরও কী তথ্য উঠে আসে, সেদিকেই এখন নজর পুরো দেশের।



















